বুদ্ধদেব বসু শেষ্ট কবিতা গুলো
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। TECHNICAL BANGLA পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি, আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
নিত্য নতুন কিছু কবিতা নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসি,,,,
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২৬: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি বুদ্ধদেব বসু এর লেখা ১০ টি কবিতা।
♦♦♦চলুন পড়ে আসি কবিতা গুলো-
১. মুক্তিযুদ্ধের কবিতা
বুদ্ধদেব বসু
আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,
শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,
ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-
শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।
কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে,
কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই;
তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল-
অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।
কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন,
তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু?
বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না
নিজেদের-
শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।
আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই,
যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে,
যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ-
নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।
আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়।
দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়,
যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো
অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ-
সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত,
যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়,
রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ-
যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব।
সব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো
ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়-
সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।
আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ,
প্রাণ কত বিপন্ন।
কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান,
যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর
মৃত্তিকায়-
চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।
তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি,
আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া?
মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের-
যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।
নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক,
যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে,
রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য
এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা ।
আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ-
সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে
নিশান।
মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে
শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
২. এক পথচারিনীকে
বুদ্ধদেব বসু
গর্জনে বধির করে রাজপথে বেগ ওঠে দুলে।
কৃশতনু, দীর্ঘকায়, ঘন কালো বসনে সংবৃত,
চলে নারী, শোকের সম্পদে এক সম্রাজ্ঞীর মতো,
মহিমামন্থর হাতে ঘাঘরার প্রান্তটুকু তুলে –
সাবলীল, শোভমান, ভাস্করিত কপোল, চিবুক ।
আর আমি – আমি তার চক্ষু থেকে, যেখানে পিঙ্গল
আকাশে ঝড়ের বীজ বেড়ে ওঠে, পান করি, কম্পিতবিহবল
মোহময় কোমলতা, আর এক মর্মঘাতী সুখ।
রশ্মি জ্বলে… রাত্রি ফের ! মায়াবিনী, কোথায় লুকোলে ?
আমাকে নতুন জন্ম দিলো যার দৃষ্টির প্রতিভা –
আর কি হবে না দেখা ত্রিকালের সমাপ্তি না হলে ?
অন্য কোথা, বহু দুরে ! অসম্ভব ! নেই আর সময় বুঝি বা !
পরস্পর – অজ্ঞতায় সরে যাই – আমারই যদিও
কথা ছিলো তোমাকে ভালোবাসার, জানোতা তুমিও !
৩. রূপান্তর
বুদ্ধদেব বসু
দিন মোর কর্মের প্রহারে পাংশু,
রাত্রি মোর জ্বলন্ত জাগ্রত স্বপ্নে |
ধাতুর সংঘর্ষে জাগো, হে সুন্দর, শুভ্র অগ্নিশিখা,
বস্তুপুঞ্জ বায়ু হোক, চাঁদ হোক নারী,
মৃত্তিকার ফুল হোক আকাশের তারা |
জাগো, হে পবিত্র পদ্ম, জাগো তুমি প্রাণের মৃণালে,
চিরন্তনে মুক্তি দাও ক্ষণিকার অম্লান ক্ষমায়,
ক্ষণিকেরে কর চিরন্তন |
দেহ হোক মন, মন হোক প্রাণ, প্রাণেহোক মৃত্যুর সঙ্গম,
মৃত্যু হোক দেহ প্রাণ, মন।
নিত্য নতুন কিছু কবিতা নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসি,,,,
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২৬: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি বুদ্ধদেব বসু এর লেখা ১০ টি কবিতা।
♦♦♦চলুন পড়ে আসি কবিতা গুলো-
১. মুক্তিযুদ্ধের কবিতা
বুদ্ধদেব বসু
আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,
শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,
ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-
শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।
কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে,
কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই;
তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল-
অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।
কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন,
তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু?
বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না
নিজেদের-
শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।
আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই,
যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে,
যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ-
নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।
আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়।
দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়,
যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো
অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ-
সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত,
যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়,
রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ-
যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব।
সব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো
ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়-
সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।
আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ,
প্রাণ কত বিপন্ন।
কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান,
যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর
মৃত্তিকায়-
চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।
তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি,
আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া?
মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের-
যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।
নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক,
যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে,
রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য
এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা ।
আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ-
সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে
নিশান।
মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে
শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
২. এক পথচারিনীকে
বুদ্ধদেব বসু
গর্জনে বধির করে রাজপথে বেগ ওঠে দুলে।
কৃশতনু, দীর্ঘকায়, ঘন কালো বসনে সংবৃত,
চলে নারী, শোকের সম্পদে এক সম্রাজ্ঞীর মতো,
মহিমামন্থর হাতে ঘাঘরার প্রান্তটুকু তুলে –
সাবলীল, শোভমান, ভাস্করিত কপোল, চিবুক ।
আর আমি – আমি তার চক্ষু থেকে, যেখানে পিঙ্গল
আকাশে ঝড়ের বীজ বেড়ে ওঠে, পান করি, কম্পিতবিহবল
মোহময় কোমলতা, আর এক মর্মঘাতী সুখ।
রশ্মি জ্বলে… রাত্রি ফের ! মায়াবিনী, কোথায় লুকোলে ?
আমাকে নতুন জন্ম দিলো যার দৃষ্টির প্রতিভা –
আর কি হবে না দেখা ত্রিকালের সমাপ্তি না হলে ?
অন্য কোথা, বহু দুরে ! অসম্ভব ! নেই আর সময় বুঝি বা !
পরস্পর – অজ্ঞতায় সরে যাই – আমারই যদিও
কথা ছিলো তোমাকে ভালোবাসার, জানোতা তুমিও !
৩. রূপান্তর
বুদ্ধদেব বসু
দিন মোর কর্মের প্রহারে পাংশু,
রাত্রি মোর জ্বলন্ত জাগ্রত স্বপ্নে |
ধাতুর সংঘর্ষে জাগো, হে সুন্দর, শুভ্র অগ্নিশিখা,
বস্তুপুঞ্জ বায়ু হোক, চাঁদ হোক নারী,
মৃত্তিকার ফুল হোক আকাশের তারা |
জাগো, হে পবিত্র পদ্ম, জাগো তুমি প্রাণের মৃণালে,
চিরন্তনে মুক্তি দাও ক্ষণিকার অম্লান ক্ষমায়,
ক্ষণিকেরে কর চিরন্তন |
দেহ হোক মন, মন হোক প্রাণ, প্রাণেহোক মৃত্যুর সঙ্গম,
মৃত্যু হোক দেহ প্রাণ, মন।
৪. প্রেমিক
বুদ্ধদেব বসু
কবরের মতো গভীর ডিভানে লুটিয়ে
মৃদু বাসে ভরা রবে আমাদের শয্যা,
সুন্দরতর দুর আকাশেরে ফুটিয়ে
দেয়ালের তাকে অদ্ভুত ফুলসজ্জা ।
যুগল হৃদয়, চরম দহনে গলিত,
বিশাল যুগল- মশালের উল্লাসে
হবে মুখোমুখি – দর্পনে প্রতিফলিত
যুগ্ম প্রানের ভাস্বর উদ্ভাসে ।
গোলাপি এবং মায়াবী নীলের সৃষ্টি
এক সন্ধ্যায় মিলবে দুয়ের দৃষ্টি,
যেন বিদায়ের দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস ;
পরে, দ্বার খুলে, মলিন মুকুরে রাঙাবে
এক দেবদূত, সুখী ও সবিশ্বাস ;
আমাদের মৃত আগুনের ঘুম ভাঙাবে ।
৫. সে রাতে ছিলাম
বুদ্ধদেব বসু
সে- রাতে ছিলাম কদাকার ইহুদিনীর পাশে,
পাশাপাশি দুটো মৃতদেহ যেন এ ওকে টানে ;
ব্যর্থ বাসনা ; পণ্য দেহের সন্নিধানে
সে-বিষাদময়ী রূপসী আমার স্বপ্নেভাসে ।
মনে পড়ে গেলো সহজাত রাজভঙ্গি তার,
দৃপ্ত লরিতে সে-কটাক্ষের সরঞ্জাম,
গন্ধমদির মুকুটের মতো অলকদাম-
যার স্মৃতি আনে প্রণয়ের পুনরঙ্গীকার ।
ও- বরতনুতে চুম্বনরাশি দিতাম ঢেলে,
শীতল পা থেকে কালো চুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে গভীর সোহাগের মণিরত্ন,-
বিনা চেষ্টায় যদি এক ফোটা অশ্রু ফেলে
কোনো সন্ধ্যায় – নিষ্ঠুরতমা হে রূপবতী ! –
ম্লান করে দিতে ঠান্ডা চোখের তীব্র জ্যোতি
No comments