কবি সুফিয়া কামাল এর কবিতা-সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা কেমন আছেন,,,?? Technical Bangla পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
হ্যালো বন্ধুরা, কবিতা পর্ব-৫: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।এই পর্বে কবি সুফিয়া কামাল কবিতা নিয়ে হাজির হলাম।তার লেখা কবিতার ছন্দ গুলো অনেক মজার তেমনি তার লেখা ১০টি কবিতা নিয়ে আসলাম,,,!!!
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো:-
১. প্রার্থনা
সুফিয়া কামাল
তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,
গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ঠে গান
সকলি তোমার দান৷
মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷
তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি
সরল সহজ সত্ পথে চলি
কত ভাল তুমি, কত ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান৷
২. হেমন্ত
সুফিয়া কামাল
সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?
আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।
সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।
আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।
হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।
৩. জন্মেছি এই দেশে
সুফিয়া কামাল
অনেক কথার গুঞ্জন শুনি
অনেক গানের সুর
সবচেয়ে ভাল লাগে যে আমার
‘মাগো’ ডাক সুমধুর।
আমার দেশের মাঠের মাটিতে
কৃষাণ দুপুরবেলা
ক্লান্তি নাশিতে কন্ঠে যে তার
সুর লয়ে করে খেলা।
মুক্ত আকাশে মুক্ত মনের
সেই গান চলে ভেসে
জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে
মরি যেন এই দেশে।
এই বাংলার আকাশ-বাতাস
এই বাংলার ভাসা
এই বাংলার নদী, গিরি-বনে
বাঁচিয়া মরিতে আশা।
শত সন্তান সাধ করে এর
ধূলি মাখি সারা গায়
বড় গৌরবে মাথা উচু করি
মানুষ হইতে চায়।
৪. পথ নহে অন্তহীন
সুফিয়া কামাল
প্রসন্ন প্রভাতে আজি যাত্রা শুরু কর হে কাফেলা!
সম্মুখে আলোকদীপ্ত বেলা।
দূর পথ প্রসারিত, দিকে দিকে চঞ্চল জীবন।
আঁধার নির্মোক হতে কর উন্মোচন
গতিময় দৃপ্ত প্রাণাবেগ,
ভেদ করি সংশয়ের মেঘ
চলো চলো যাত্রাপথে, সম্মুখে অনন্ত সম্ভাবনা!
পথে পথে যদি দেয় হানা
খল মুষিকের দল, তবু চলো চলো হে কাফেলা!
তোমারে দেখাবে পথ দীপ্ত রাঙ্গা উদয়ের বেলা।
আবারও নামিবে রাত্রি, তবু দ্বিধা করিয়ো না আর,
রুদ্ধ করিয়ো না গতি, লক্ষ্য দৃঢ় রাখিয়ো তোমার
মনযিল-ই-মোকসেদে তুমি উপনীত হবে একদিন,
দুর্বার রাখিয়ো গতি! পথ কভু নহে অন্তহীন।
হে কাফেলা! যাত্রা করো! মনযিলে মনযিলে যাও বলে
আজি এ প্রভাতে আলোকের পথে ঈদগার পথে চলে
খুশী ভরা ক-টি প্রাণ
কটি আনন্দের গান
স্বার্থ বিহীন অন্তর নিয়ে ক-টি জন করে আজি দান।
৫. কালের যাএার ধ্বনি
সুফিয়া কামাল
কাল কভু চুপ নাহি রয়,
কথা কয়, সে যে কথা কয়।
সে আবার জেগে ওঠে প্রত্যহের জীবন-স্পন্দনে;
সে দুর্বার প্রাণবেগে বেঁচে ওঠে নিত্যের স্মরণে।
দুর্জয় শক্তিতে তার কীর্তি লেখে যুগের প্রাচীরে
শতাব্দীর সাক্ষ্য রাখি, দিবস-নিশীথ-বক্ষ চিরে
গতি চলে তার,
তার সাথে ছন্দ রেখে চলে সিন্ধু নদী পারাবার।
কত প্রভাতের সূর্য হেসে আসে বাড়াইয়া কর,
হেলে পড়ে শোণিতাক্ত দীপ্ত দ্বিপ্রহর,
শোকাচ্ছন্ন অপরাহ্ন আসে,
নিশীথের সুপ্তি ভাঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে ভয়ে অবিশ্বাসে।
তারও পরে আসে সেই দিন
মৃতের কঙ্কাল পরে জেগে ওঠে জীবন নবীন।
বিলুপ্ত প্রত্যাশা কাঁপে শক্তিরূপে বক্ষের পঞ্জরে
সে মূর্ত প্রতীক হয়ে আযাদীর তরে
শতাব্দীর রুদ্ধ দ্বার আঘাতে আঘাতে করি চুর
বন্দীত্ব শৃঙ্খল ভাঙ্গা ধ্বনি শুনে অতি সুমধুর।
শোণিত উচ্ছ্বাসি ওঠে, শিরায় শিরায় জাগে সাড়া,
কোটি কণ্ঠে বেজে ওঠে উদাত্ত গম্ভীর সেই 'নারা'।
বিদ্যুৎ চমকি যায় শিহরণ লাগে তীব্র বেগে
বজ্রের আরাবে মেঘে মেঘে
নির্ঘোষিয়া স্বর প্রসারিয়া কর
ঊধর্ে্ব তুলি উড়ায় পতাকা
শ্বেত-শ্যাম অর্ধ চন্দ্র-পূর্ণতারা অাঁকা।
শান্তি সাম্য সেবা মৈত্রী ঘোষিয়াছে প্রসারিয়া হাত
কওমী হেলাল আজ দীনি-জমহুরিয়াত!
শানের জলুস চলে রাজপথে দৃপ্ত সুগম্ভীর মহিমায়,
নিত্যকার সূর্য তার সুপ্রসন্ন কিরণ ছড়ায়।
আ-সমুদ্র হিমাচল গিরিদরী বনানীর পারে
তৌহীদের মন্ত্র বাজে ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে।
ওড়ে একই ঝা-ার প্রতীক,
সর্বকালে সর্বদেশে সর্বদিগ্বিদিক
যে জাতি দিয়েছে পাড়ি,
গড়িয়া তুলেছে নিজ দেশ,
ক্ষুদ্র তুচ্ছ ভেদাভেদ করিয়া নিঃশেষ,
মহান ধর্মের সিংহদ্বার
মুক্ত করি রাখিয়াছে, মিলনের মহা-পারাবার
গড়িয়াছে মানুষে মানুষে,
দিয়াছে আসন সব, মানুষের সব জাতিধর্ম-নির্বিশেষে,
যারা মুক্তি লাগি
গড়েছে বাঁশের কেল্লা, যে মহান ত্যাগী
মুক্তির অমৃত ফল করেছে সন্ধান-
যত মহা মানবের প্রাণ
অলক্ষ্যে রহিয়া তারা কালের যাত্রার ধ্বনি শুনি
হেরে নাকি সেই সঞ্জীবনী।
লভিয়াছে তাহাদের উত্তর সাধক
কালের কুটির কক্ষে অবরুদ্ধ ছিল যে আলোক
তাহার এনেছে প্রাণ, দুর্গমেরে করিয়াছে জয়
কাল কভু চুপ নাহি রয়-
কথা কয় সে যে কথা কয়।
৬. তাহারেই পড়ে মনে
সুফিয়া কামাল
হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?
এখনো দেখনি তুমি? কহিলাম কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
৭. শুধু খেলা নয়
সুফিয়া কামাল
খেলাঘরে শুধুই খেলা
ভেবো না তা কেউ
দেখবে এসো কত কাজ আর
কত খুশীর ঢেউ।
ভাই আসছে বোন আসছে
আসছে নানা নানী
সবাই হাসে সকল কাজে
কত কী যে জানি।
সুখে দুখে সবার সাথে
হাসা কাঁদার খেলা
এই জগতে খেলাঘরের
খেলা আছে মেলা।
ধম্ম কম্ম সেবা সাম্যে
হৃদয় যেন ভরে--
এই গানটা গাইছে সবাই
নিত্য খেলাঘরে।
৮. ঈদ
সুফিয়া কামাল
আমার নিশীথের আধার সিন্ধু পাড়ি দিয়ে এক তরী
ফিরদৌস হতে সওগাত লয়ে গগন কিনার ভরি
কত উতসুক মানব মনের শান্তি কামনা লয়ে,
দ্বিতীয়ার চাঁদ অস্ত গগনে পাবক প্রতীক হয়ে।
মাহে রমজান মোবারক হোক প্রতি মানুষের তরে
সিয়ামের শেষে ঈদের খুশীতে মন আনন্দে ভরে
সাম্যের গানে আকাশে বাতাসে ঝরায়ে সোনালী আভা
উতসব আনে মাঠে, মসজিদে, মানব হৃদয় কাবা
প্রার্থনা রত! প্রতি মানুষের তরে সুখ ব্যাথা ভার
বহন করিয়া এনেছে ঈদের ক্ষীণ চাঁদ দ্বিতীয়ার।
বার মাস ভুখা, রোজা, তার তরেএনে দিল ইফতার
হে ধনিক! তুমি আজিকার দিনে রুদ্ধ রেখো না দ্বার
মিলনের দিনে আজিকে তোমার মুক্ত হৃদয় হাতে
তুমি মুসলিম! তুমি যে মানুষ! সব মানুষের সাথে
ফিত্রাবিলায়ে, শিরিন শিরনী আতর গোলাপ বাসে
দীন বলে যারে সরায়েছ দূরে তাহারে ডাকিয়া পাশে
কর কোলাকুলি, উঠুক উজলি সিয়াম ক্লান্ত মুখে
উদার অসীম শান্তিতে ভরি এই হেলালের তলে
সব মানুষের মিলন তীর্থে মিলে এসে দলে দলে
ভুখারে খাদ্য, নিঃস্বের দিয়ে সঞ্চিত ধনভাগ
সব মানুষের অন্তরে আনো অনন্ত অনুরাগ।
রিক্তের মুঠি ভরিয়া উঠুক, নিঃস্ব লভুক বল
মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াক, আছে আছে সম্বল
একের ব্যাথার অপরে অংশ নিলে তরে লঘু ভার
হৃদয় আবার নতুন করিয়া পথ পাবে বাঁচিবার
যত ঈদগাহে জামাত জমিবে, যতেক মুসলমান
জাতির জীবনে মিলনের গানে উন্নত সুমহান।
ঐক্য, সাম্য, প্রীতি, সেবা দানে হেলালে প্রতীক করি
সারা জাহানের মুসলিম জাগো, আর করিয়ো না দেরী
অমা নিশীথের আধার কেটেছে, হেলাল হাসিছে নভে
সব মুসলিম মানুষ, জামাতে বলিবে সবে।
৯. বাসন্তী
সুফিয়া কামাল
আমার এ বনের পথে
কাননে ফুল ফোটাতে
ভুলে কেউ করত না গো
কোনদিন আসা-যাওয়া।
সেদিন ফাগুন-প্রাতে
অরুণের উদয়-সাথে
সহসা দিল দেখা
উদাসী দখিন হাওয়া।...
বুকে মোর চরণ ফেলে
বধুঁ মোর আজকে এলে
আজি যে ভরা সুখে
কেবলই পরাণ কাঁদে।
১০. ছোটন ঘুমায়
সুফিয়া কামাল
গোল করো না গোল করো না
ছোটন ঘুমায় খাটে।
এই ঘুমকে কিনেত হল
নওয়াব বাড়ির হাটে।
সোনা নয় রুপা নয়
দিলাম মোতির মালা
তাইতো ছোটন ঘুমিয়ে আছে
ঘর করে উজালা।
আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হ্যালো বন্ধুরা, কবিতা পর্ব-৫: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।এই পর্বে কবি সুফিয়া কামাল কবিতা নিয়ে হাজির হলাম।তার লেখা কবিতার ছন্দ গুলো অনেক মজার তেমনি তার লেখা ১০টি কবিতা নিয়ে আসলাম,,,!!!
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো:-
১. প্রার্থনা
সুফিয়া কামাল
তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,
গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ঠে গান
সকলি তোমার দান৷
মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷
তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি
সরল সহজ সত্ পথে চলি
কত ভাল তুমি, কত ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান৷
২. হেমন্ত
সুফিয়া কামাল
সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?
আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।
সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।
আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।
হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।
৩. জন্মেছি এই দেশে
সুফিয়া কামাল
অনেক কথার গুঞ্জন শুনি
অনেক গানের সুর
সবচেয়ে ভাল লাগে যে আমার
‘মাগো’ ডাক সুমধুর।
আমার দেশের মাঠের মাটিতে
কৃষাণ দুপুরবেলা
ক্লান্তি নাশিতে কন্ঠে যে তার
সুর লয়ে করে খেলা।
মুক্ত আকাশে মুক্ত মনের
সেই গান চলে ভেসে
জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে
মরি যেন এই দেশে।
এই বাংলার আকাশ-বাতাস
এই বাংলার ভাসা
এই বাংলার নদী, গিরি-বনে
বাঁচিয়া মরিতে আশা।
শত সন্তান সাধ করে এর
ধূলি মাখি সারা গায়
বড় গৌরবে মাথা উচু করি
মানুষ হইতে চায়।
৪. পথ নহে অন্তহীন
সুফিয়া কামাল
প্রসন্ন প্রভাতে আজি যাত্রা শুরু কর হে কাফেলা!
সম্মুখে আলোকদীপ্ত বেলা।
দূর পথ প্রসারিত, দিকে দিকে চঞ্চল জীবন।
আঁধার নির্মোক হতে কর উন্মোচন
গতিময় দৃপ্ত প্রাণাবেগ,
ভেদ করি সংশয়ের মেঘ
চলো চলো যাত্রাপথে, সম্মুখে অনন্ত সম্ভাবনা!
পথে পথে যদি দেয় হানা
খল মুষিকের দল, তবু চলো চলো হে কাফেলা!
তোমারে দেখাবে পথ দীপ্ত রাঙ্গা উদয়ের বেলা।
আবারও নামিবে রাত্রি, তবু দ্বিধা করিয়ো না আর,
রুদ্ধ করিয়ো না গতি, লক্ষ্য দৃঢ় রাখিয়ো তোমার
মনযিল-ই-মোকসেদে তুমি উপনীত হবে একদিন,
দুর্বার রাখিয়ো গতি! পথ কভু নহে অন্তহীন।
হে কাফেলা! যাত্রা করো! মনযিলে মনযিলে যাও বলে
আজি এ প্রভাতে আলোকের পথে ঈদগার পথে চলে
খুশী ভরা ক-টি প্রাণ
কটি আনন্দের গান
স্বার্থ বিহীন অন্তর নিয়ে ক-টি জন করে আজি দান।
৫. কালের যাএার ধ্বনি
সুফিয়া কামাল
কাল কভু চুপ নাহি রয়,
কথা কয়, সে যে কথা কয়।
সে আবার জেগে ওঠে প্রত্যহের জীবন-স্পন্দনে;
সে দুর্বার প্রাণবেগে বেঁচে ওঠে নিত্যের স্মরণে।
দুর্জয় শক্তিতে তার কীর্তি লেখে যুগের প্রাচীরে
শতাব্দীর সাক্ষ্য রাখি, দিবস-নিশীথ-বক্ষ চিরে
গতি চলে তার,
তার সাথে ছন্দ রেখে চলে সিন্ধু নদী পারাবার।
কত প্রভাতের সূর্য হেসে আসে বাড়াইয়া কর,
হেলে পড়ে শোণিতাক্ত দীপ্ত দ্বিপ্রহর,
শোকাচ্ছন্ন অপরাহ্ন আসে,
নিশীথের সুপ্তি ভাঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে ভয়ে অবিশ্বাসে।
তারও পরে আসে সেই দিন
মৃতের কঙ্কাল পরে জেগে ওঠে জীবন নবীন।
বিলুপ্ত প্রত্যাশা কাঁপে শক্তিরূপে বক্ষের পঞ্জরে
সে মূর্ত প্রতীক হয়ে আযাদীর তরে
শতাব্দীর রুদ্ধ দ্বার আঘাতে আঘাতে করি চুর
বন্দীত্ব শৃঙ্খল ভাঙ্গা ধ্বনি শুনে অতি সুমধুর।
শোণিত উচ্ছ্বাসি ওঠে, শিরায় শিরায় জাগে সাড়া,
কোটি কণ্ঠে বেজে ওঠে উদাত্ত গম্ভীর সেই 'নারা'।
বিদ্যুৎ চমকি যায় শিহরণ লাগে তীব্র বেগে
বজ্রের আরাবে মেঘে মেঘে
নির্ঘোষিয়া স্বর প্রসারিয়া কর
ঊধর্ে্ব তুলি উড়ায় পতাকা
শ্বেত-শ্যাম অর্ধ চন্দ্র-পূর্ণতারা অাঁকা।
শান্তি সাম্য সেবা মৈত্রী ঘোষিয়াছে প্রসারিয়া হাত
কওমী হেলাল আজ দীনি-জমহুরিয়াত!
শানের জলুস চলে রাজপথে দৃপ্ত সুগম্ভীর মহিমায়,
নিত্যকার সূর্য তার সুপ্রসন্ন কিরণ ছড়ায়।
আ-সমুদ্র হিমাচল গিরিদরী বনানীর পারে
তৌহীদের মন্ত্র বাজে ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে।
ওড়ে একই ঝা-ার প্রতীক,
সর্বকালে সর্বদেশে সর্বদিগ্বিদিক
যে জাতি দিয়েছে পাড়ি,
গড়িয়া তুলেছে নিজ দেশ,
ক্ষুদ্র তুচ্ছ ভেদাভেদ করিয়া নিঃশেষ,
মহান ধর্মের সিংহদ্বার
মুক্ত করি রাখিয়াছে, মিলনের মহা-পারাবার
গড়িয়াছে মানুষে মানুষে,
দিয়াছে আসন সব, মানুষের সব জাতিধর্ম-নির্বিশেষে,
যারা মুক্তি লাগি
গড়েছে বাঁশের কেল্লা, যে মহান ত্যাগী
মুক্তির অমৃত ফল করেছে সন্ধান-
যত মহা মানবের প্রাণ
অলক্ষ্যে রহিয়া তারা কালের যাত্রার ধ্বনি শুনি
হেরে নাকি সেই সঞ্জীবনী।
লভিয়াছে তাহাদের উত্তর সাধক
কালের কুটির কক্ষে অবরুদ্ধ ছিল যে আলোক
তাহার এনেছে প্রাণ, দুর্গমেরে করিয়াছে জয়
কাল কভু চুপ নাহি রয়-
কথা কয় সে যে কথা কয়।
৬. তাহারেই পড়ে মনে
সুফিয়া কামাল
হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?
এখনো দেখনি তুমি? কহিলাম কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
৭. শুধু খেলা নয়
সুফিয়া কামাল
খেলাঘরে শুধুই খেলা
ভেবো না তা কেউ
দেখবে এসো কত কাজ আর
কত খুশীর ঢেউ।
ভাই আসছে বোন আসছে
আসছে নানা নানী
সবাই হাসে সকল কাজে
কত কী যে জানি।
সুখে দুখে সবার সাথে
হাসা কাঁদার খেলা
এই জগতে খেলাঘরের
খেলা আছে মেলা।
ধম্ম কম্ম সেবা সাম্যে
হৃদয় যেন ভরে--
এই গানটা গাইছে সবাই
নিত্য খেলাঘরে।
৮. ঈদ
সুফিয়া কামাল
আমার নিশীথের আধার সিন্ধু পাড়ি দিয়ে এক তরী
ফিরদৌস হতে সওগাত লয়ে গগন কিনার ভরি
কত উতসুক মানব মনের শান্তি কামনা লয়ে,
দ্বিতীয়ার চাঁদ অস্ত গগনে পাবক প্রতীক হয়ে।
মাহে রমজান মোবারক হোক প্রতি মানুষের তরে
সিয়ামের শেষে ঈদের খুশীতে মন আনন্দে ভরে
সাম্যের গানে আকাশে বাতাসে ঝরায়ে সোনালী আভা
উতসব আনে মাঠে, মসজিদে, মানব হৃদয় কাবা
প্রার্থনা রত! প্রতি মানুষের তরে সুখ ব্যাথা ভার
বহন করিয়া এনেছে ঈদের ক্ষীণ চাঁদ দ্বিতীয়ার।
বার মাস ভুখা, রোজা, তার তরেএনে দিল ইফতার
হে ধনিক! তুমি আজিকার দিনে রুদ্ধ রেখো না দ্বার
মিলনের দিনে আজিকে তোমার মুক্ত হৃদয় হাতে
তুমি মুসলিম! তুমি যে মানুষ! সব মানুষের সাথে
ফিত্রাবিলায়ে, শিরিন শিরনী আতর গোলাপ বাসে
দীন বলে যারে সরায়েছ দূরে তাহারে ডাকিয়া পাশে
কর কোলাকুলি, উঠুক উজলি সিয়াম ক্লান্ত মুখে
উদার অসীম শান্তিতে ভরি এই হেলালের তলে
সব মানুষের মিলন তীর্থে মিলে এসে দলে দলে
ভুখারে খাদ্য, নিঃস্বের দিয়ে সঞ্চিত ধনভাগ
সব মানুষের অন্তরে আনো অনন্ত অনুরাগ।
রিক্তের মুঠি ভরিয়া উঠুক, নিঃস্ব লভুক বল
মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াক, আছে আছে সম্বল
একের ব্যাথার অপরে অংশ নিলে তরে লঘু ভার
হৃদয় আবার নতুন করিয়া পথ পাবে বাঁচিবার
যত ঈদগাহে জামাত জমিবে, যতেক মুসলমান
জাতির জীবনে মিলনের গানে উন্নত সুমহান।
ঐক্য, সাম্য, প্রীতি, সেবা দানে হেলালে প্রতীক করি
সারা জাহানের মুসলিম জাগো, আর করিয়ো না দেরী
অমা নিশীথের আধার কেটেছে, হেলাল হাসিছে নভে
সব মুসলিম মানুষ, জামাতে বলিবে সবে।
৯. বাসন্তী
সুফিয়া কামাল
আমার এ বনের পথে
কাননে ফুল ফোটাতে
ভুলে কেউ করত না গো
কোনদিন আসা-যাওয়া।
সেদিন ফাগুন-প্রাতে
অরুণের উদয়-সাথে
সহসা দিল দেখা
উদাসী দখিন হাওয়া।...
বুকে মোর চরণ ফেলে
বধুঁ মোর আজকে এলে
আজি যে ভরা সুখে
কেবলই পরাণ কাঁদে।
১০. ছোটন ঘুমায়
সুফিয়া কামাল
গোল করো না গোল করো না
ছোটন ঘুমায় খাটে।
এই ঘুমকে কিনেত হল
নওয়াব বাড়ির হাটে।
সোনা নয় রুপা নয়
দিলাম মোতির মালা
তাইতো ছোটন ঘুমিয়ে আছে
ঘর করে উজালা।
আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
No comments