কবি বিনয় মজুমদার এর কবিতা-সমূহ - TECHNICAL BANGLA

কবি বিনয় মজুমদার এর কবিতা-সমূহ

আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। Technical Bangla পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২১: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন।  আজকে আমি  নিয়ে এসেছি কবি  বিনয় মজুমদার  এর লেখা ১০ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-

১.  শিমুল গাছের নিচে
       বিনয় মজুমদার


শিমুল গাছের নিচে গম ক্ষেত দেখলাম আজ। 
 পুরো গম ক্ষেতটিই বাদামি রঙের, তাতে অন্য রঙ নেই 
 দেখে দেখে মনে হয় ক্ষেতে গম পেকে গেছে প্রায়। 
 আমিও পথের মাঝে থেমে প’ড়ে গম গাছগুলি দেখলাম। 
 বুঝলাম ইউরোপে এবং আমেরিকায় শস্যক্ষেতগুলি এ প্রকার। 
 আমাদের বাঙলায় ধান ক্ষেত সমূহের ধরন যেমন 
 গমক্ষেত সমূহের ধরন তেমন নয়, স্পষ্টতই বিদেশি ধরন। 
 এ যেন ইউরোপের কিয়দংশ দেখছি এখানে 
 শিমুল গাছের নিচে; এইসব ধান গম মানুষের মেধার ফসল 
 ধান গম খেয়ে খেয়ে মানুষের হৃৎপিন্ড সচল থাকে এ কথা সকলেই জানি।

২.  একটি উজ্জ্বল মাছ
        বিনয় মজুমদার

একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে 
 দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে 
 পুনরায় ডুবে গেলো- এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে 
 বেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল। 
 বিপন্ন মরাল ওড়ে, অবিরাম পলায়ন করে, 
 যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচে 
 রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ; 
 স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে পাহাড়ে; 
 সমস্ত জলীয় গান বাষ্পিভূত হ’য়ে যায়, তবু 
 এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রমত্স্য, তুমি…তুমি… 
 কিংবা, দ্যাখো, ইতস্তত অসুস্থ বৃক্ষেরা 
 পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্থলী 
 দীর্ঘ-দীর্ঘ ক্লান্তশ্বাসে আলোড়িত করে; 
 তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে 
 চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা।

৩.    তুমি যেন ফিরে
       বিনয় মজুমদার

তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকে 
 করাঘাত ক’রে ক’রে ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রে 
 আড়ালে যেও না; আমি এত দিনে চিনেছি কেবল 
 অপার ক্ষমতাময়ী হাত দুটি, ক্ষিপ্র হাত দুটি— 
 ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত। 
 কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি? সার্থক চক্রের 
 আশায় শেষের পঙক্তি ভেবে ভেবে নিদ্রা চ’লে গেছে। 
 কেবলি কবোষ্ণ চিন্তা, রস এসে চাপ দিতে থাকে। 
 তারা যেন কুসুমের অভ্যন্তরে মধুর ঈর্ষিত 
 স্থান চায়, মালিকায় গাঁথা হয়ে ঘ্রাণ দিতে চায়। 
 কবিতা সমাপ্ত হতে দাও, নারী, ক্রমে—ক্রমাগত 
 ছন্দিত ঘর্ষণে, দ্যাখ, উত্তেজনা শির্ষ লাভ করে, 
 আমাদের চিন্তাপাত, কসপাত ঘটে, শান্তি নামে। 
 আড়ালে যেও না যেন, ঘুম পাড়াবার সাধ করে।

৪.      বষার্কালে
      বিনয় মজুমদার


বর্ষাকালে আমাদের পুকুরে শাপলা হয়, শীত গ্রীষ্মে এই 
 পুকুর সম্পূর্ণ শুশক হয়ে যায় পুকুরের নিচে ঘাস গিজায়,তখন– 
 পুকুরে শাপলা আর থাকে না, আবার সেই বর্ষাকাল আসে 
 তখন পুকুরটিতে জল জমে পুনরায় শাপলা গজায়। 
 এই হলো শাপলার কাহিনী, শাপলা ফুল শাপলার পাতা 
 ছন্দে ছন্দে দুলে যায়, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প ইত্যাদি সমেত। 
 এবং পুকুরটিও চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল, পুকুরের আনন্দ বেদনা 
 পাতা হয়ে ফুল হয়ে ফুটে ওঠে পৃথিবীতে, এই বিশ্বলোকে। 
 শাপলার ফুলে ফুলে পাতায় কখনো মিল থাকে, মিল কখনো থাকে না।

৫.       কুঁড়ি
   বিনয় মজুমদার


পদ্মপাতার প’রে জল টলমল করে; কাছেকোনো ফুল তো দেখিনা, 
 সাধ জাগে, –বড়ো সাধ জাগে- 
 ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে 
 আকাশের অভিমুখী উন্মুখ কুঁড়ি আছে কিনা। 
 হয়তো সে কুঁড়ি 
 ফোটবার ইচ্ছায় থেকে থেকে– থেকে থেকে 
 কোন কালে হয়ে গেছে বুড়ি; 
 কোন কালে তার সব রূপ গেছে প’চে; 
 হয়তো বা তার আর নেই কোন লেশ। 
 সাধ জাগে, বড়ো সাধ জাগে- 
 ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে 
 এখনো রয়েছে কিনা কোন অবশেষ।

৬. ভালোবাসা দিতে পারি
         বিনয় মজুমদার


ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম? 
 লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ’রে যায় – 
 হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। 
 এ আমার অভিজ্ঞতা। পারাবতগুলি জ্যোৎস্নায় 
 কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি। 
 শাশ্বত, সহজতম এই দান — শুধু অঙ্কুরের 
 উদগমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে 
 ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না ক’রে শ্যামল হতে দেওয়া। 
 এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি 
 মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলে ফেলি। 
 গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচুড়া থেকে 
 পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে। 
 প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি 
 চ’লে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।

৭. এরূপ বিরহ ভালো
       বিনয় মজুমদার

এরূপ বিরহ ভালো,কবিতার প্রথম পাঠের 
 পরবর্তীকাল যদি নিদ্রিতের মতো থাকা যায়, 
 স্বপ্নাচ্ছন্ন, কাল্পনিক; দীর্ঘকাল পরে পুনরায় 
 পাঠের সময় যদি শাশ্বত ফুলের মতো স্মিত, 
 রূপ, ঘ্রাণ, ঝ’রে পড়ে তাহলে সার্থক সব ব্যথা, 
 সকল বিরহ, স্বপ্ন; মদিরার বুদ্বুদের মতো 
 মৃদু শব্দে সমাচ্ছন্ন, কবিতা, তোমার অপ্রণয়। 
 হাসির মতন তুমি মিলিয়ে গিয়েছো সিন্ধুপারে। 
 এখন অপেক্ষা করি, বালিকাকে বিদায়দেবার 
 বহু পরে পুনরায় দর্শনের অপেক্ষার মতো- 
 হয়তো সর্বস্ব তার ভ’রে গেছে চমকে চমকে। 
 অভিভূত প্রত্যাশায় এরূপ বিরহব্যথা ভালো।।

৮.                  মুকুট
              বিনয় মজুমদার

এখন পাকুড়গাছে সম্পূর্ণ নূতন পাতা, তার সঙ্গে বিবাহিত এই 
 বটগাছে লাল লাল ফল ফলে আছে। 
 চারিদিকে চিরকাল আকাশ থাকার কথা,আছে কিনা আমি দেখে নিই। 
 অনেক শালিক পাখি আসে রোজ এই গাছে,বট ফলগুলি 
 তারা খুটেঁ খুটেঁ খায় বসন্তের হাওয়া বয়, শালিকের ডাক 
 এবং পাতার শব্দ মিশে একাকার হয়ে চারদিকে ভাসে। 
 এখন অনেক মেঘ সোনালি রূপালি কালোআকাশে আকাশে। 
 একটি মুকুট সেই পাকুড় গাছের নিচেশাড়ি পরে দাড়িয়েঁ রয়েছে। 
 মদের ফেনার মতো সাদা সাদা দাঁত আমি অনেক দেখেছি। 
 জেনেছি আগুন যত্ দুরেই হোক না কেন তাকে দেখা যায়। 
 মুকুরের বুকে ঠাঁই পেতে হলে সরাসরি সম্মুখেই চলে যেতে হয় 
 পিছনে বা পাশে নয়; গ্রন্থ ছন্দোবদ্ধ হলে তবে আপনিই মনে থাকে 
 মৃত্যু অবধিই থাকে; মানুষ সমুদ্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।

৯.          ঘুমোবার আগে
              বিনয় মজুমদার


তপ্ত লৌহদণ্ড জল ডোবাতে এবং সেই জল খেত নরনারীগণ, 
 তার ফলে মানুষের রক্তাল্পতা দুর্বলতা জনিত অসুখ সেরে যেত। 
 এইভাবে এককালে বাঁচতাম মানুষেরাএই পৃথিবীতে। 
 তবে সবই ঠিক আছে, ঘুমোবার আগে মনেপড়ে সারা দিনের ঘটনা। 
 মাঝরাতে বিছানায় চাঁদের জ্যোৎস্না এসে পড়ে দূর থেকে। 
 শুধু চাঁদ দেখবার জন্য আমি বিছানায় উঠে বসি, চাঁদ আছে বলে 
 ঘুমোতে বিলম্ব হয়। আমি তাড়াতাড়ি ফের যাব।

১০. সময়ের সাথে এক বাজি ধরে
            বিনয় মজুমদার


সময়ের সাথে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি। 
 ব্যর্থ আকাঙ্খায়, স্বপ্নে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে যেখানে 
 একদিন জল জমে, আকাশ বিস্বিত হয়ে আসে 
 সেখানে সত্বর দেখি,মশা জন্মে; অমল প্রতূষে 
 ঘুম ভেঙ্গে দেখা যায়; আমাদের মুখের ভিতর 
 স্বাদ ছিল, তৃপ্তি ছিল জে সব আহার্য প’চে 
 ইতিহাস সৃষ্টি করে; সুখ ক্রমে ব্যথা হয়ে উঠে। 
 অঙ্গুরীয় নীল পাথরের বিচ্ছুরিত আলো 
 অনুষ্ণো অনির্বাণ, জ্বলে যায় পিপাসার বেগে 
 ভয় হয় একদিন পালকের মত ঝরে যাব।



কবিতা গুলো কেমন লাগতেছে তা আমাদের জানাবেন। এই কবিতা গুলো  কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য  ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর অনেক কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.