কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর কবিতা-সমূহ - TECHNICAL BANGLA

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর কবিতা-সমূহ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। TECHNICAL BANGLA পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি, আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
নিত্য নতুন কিছু কবিতা নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসি,,,,

হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২৫: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন।  আজকে আমি  নিয়ে এসেছি কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর লেখা ১০ টি কবিতা।
♦♦♦চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-

১.        গুচ্ছ কবিতা
      রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

                  ১. 
 থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক 
 একলা থাকার খুব দুপুরে 
 একটি ঘুঘু ডাকুক 

             ২. 
 দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা 
 বুঝতে কেন পাছো না ছাই 
 মানুষ আমি, যন্ত্র না! 

             ৩. 
 চোখ কেড়েছে চোখ 
 উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক। 

২.      খতিয়ান
   রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ


‘হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় ঋণে 
 অথচ আমার শস্যের মাঠ ভরা। 
 রোদ্দুর খুঁজে পাই না কখনো দিনে, 
 আলোতে ভাসায় রাতের বসুন্ধরা। 

 টোকা দিলে ঝরে পচা আঙুলের ঘাম, 
 ধস্ত তখন মগজের মাস্তুল 
 নাবিকেরা ভোলে নিজেদের ডাক নাম 
 চোখ জুড়ে ফোটে রক্তজবার ফুল। 

 ডেকে ওঠো যদি স্মৃতিভেজা ম্লান স্বরে, 
 উড়াও নীরবে নিভৃত রুমালখানা 
 পাখিরা ফিরবে পথ চিনে চিনে ঘরে 
 আমারি কেবল থাকবে না পথ জানা– 

 টোকা দিলে ঝরে পড়বে পুরনো ধুলো 
 চোখের কোণায় জমা একফোঁটা জল। 
 কার্পাস ফেটে বাতাসে ভাসবে তুলো 
 থাকবে না শুধু নিবেদিত তরুতল 
 জাগবে না বনভূমির সিথানে চাঁদ 
 বালির শরীরে সফেদ ফেনার ছোঁয়া 
 পড়বে না মনে অমীমাংসিত ফাঁদ 
 অবিকল রবে রয়েছে যেমন শোয়া 

 হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় প্রেমে 
 অথচ আমার ব্যাপক বিরহভূমি 
 ছুটে যেতে চাই– পথ যায় পায়ে থেমে 
 ঢেকে দাও চোখ আঙুলের নখে তুমি।’ 

৩.  ভালবাসার সময় তো নেই 
        রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ভালবাসার সময় তো নেই 
 ব্যস্ত ভীষন কাজে, 
 হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে। 

 ঘামের জলে ভিজে সাবাড় 
 করাল রৌদ্দুরে, 
 কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে। 

 কাজের মাঝে দিন কেটে যায় 
 কাজের কোলাহল 
 তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল। 
 নদী আমার বয় না পাশে 
 স্রোতের দেখা নেই, 
 আটকে রাখে গেরস্থালির লেই। 

 তোমার দিকে ফিরবো কখন 
 বন্দী আমার চোখ 
 পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ। 

৪.       উলটো ঘুড়ি
      রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন! 
 বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা- 

 দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে 
 স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি, 
 কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত? 

 সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু- 
 না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি, 
 যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে 
 উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি। 

 সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি 
 সহজে থাকি না কাছে, 
 পাছে বাঁধা পড়ে যাই। 
 বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধরে, 
 আমি শুধু যাই দূরে। 

 আমি দূরে যাই- 
 স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া, 
 সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে… 

 এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?

৫. এক গ্লাস অন্ধকার হাতে
     রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। 
 শুন্যতার দিকে চোখ, শুন্যতা চোখের ভেতরও– 
 এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। 
 বিলুপ্ত বনস্পতির ছায়া, বিলুপ্ত হরিণ। 
 মৌসুমী পাখির ঝাঁক পালকের অন্তরালে 
 তুষারের গহন সৌরভ ব’য়ে আর আনে না এখন। 

 দৃশ্যমান প্রযুক্তির জটাজুটে অবরুদ্ব কাল, 
 পূর্ণিমার চাঁদ থেকে ঝ’রে পড়ে সোনালী অসুখ। 
 ডাক শুনে পেছনে তাকাই– কেউ নেই। 
 এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি একা…. 
 সমকালীন সুন্দরীগণ অতিদ্রুত উঠে যাচ্ছে 
 অভিজাত বেডরুমে, 
 মূল্যবান আসবাবপত্রের মতন নির্বিকার। 
 সভ্যতা তাকিয়ে আছে তার অন্তর্গত ক্ষয় 
 আর প্রশংসিত পচনের দিকে। 

 উজ্জ্বলতার দিকে চোখ, চেয়ে আছি– 
 ডীপ ফ্রিজে হিমায়িত কষ্টের পাশেই প্রলোভন, 
 অতৃপ্ত শরীরগুলো খুঁজে নিচ্ছে চোরাপথ– সেক্সড্রেন। 

 রুগ্নতার কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা বিলাচ্ছে অপচয়– 
 মায়াবী আলোর নিচে চমৎকার হৈ চৈ, নীল রক্ত, নীল ছবি 

 জেগে ওঠে একখন্ড ধারালো ইস্পাত-চকচকে, 
 খুলির ভেতরে তার নড়াচড়া টের পাই শুধু। 

 ইতিমধ্যে ককটেলে ছিন্নভিন্ন পরিচয়,সম্পর্ক,পদবী– 
 উজ্জ্বলতার ভেতরে ফণা তুলে আর এক ভিন্ন অন্ধকার। 
 গ্লাসভর্তি অন্ধকার উল্টে দিই এই অন্ধকারে।

৬.   দূরে আছো দূরে
    রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

তোমাকে পারিনি ছুঁতে, তোমার তোমাকে- 
 উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ, 
 পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি। 
 তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই। 

 যেভাবে ঝিনুক খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে 
 আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ, 
 পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী। 

 শরীরের তীব্রতম গভীর উল্লাসে 
 তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি- 
 তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই। 
 জীবনের প’রে রাখা বিশ্বাসের হাত 
 কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা। 
 কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে 
 বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়- 

 তোমাকে পারিনি ছুঁতে-আমার তোমাকে, 
 ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি 
 তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের। 
 অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া- 

 তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।।

৮. এ কেমন ভ্রান্তি আমার
     রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

এ কেমন ভ্রান্তি আমার! 
 এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে, 
 দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ। 
 এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি, 
 অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ- 
 তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান। 

 হাত রাখলেই মনে হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে, 
 স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল। 
 তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো, 
 সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত 
 করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে। 
 এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি.. 

 কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি 
 পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি। 
 করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো, 
 দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি। 
 আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা, 
 আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম- 
 এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি। 

 চলে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে, 
 চলে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।

৯.  মনে পড়ে সুদূরের মাস্তুল
        রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

পেছনে তাকালে কেন মূক হয়ে আসে ভাষা! 
 মনে পড়ে সেই সব দুপুরের জলাভূমি, 
 সেই সব বেতফল, বকুল কুড়ানো ভোর, 
 আহা সেই রাঙাদির আঁচলতলের উত্তাপ, 
 মনে পড়ে... 

 মনে পড়ে, বন্দরে সেই সব কালোরাত, 
 ঈগলের মতো ডানা সেই বিশাল গভীর রাতে, 
 একটি কিশোর এসে চুপি চুপি সাগরের কূলে 
          দাঁড়াতো একাকী 
 তন্ময় চোখে তার রাশি রাশি বিস্ময় নিয়ে। 
  কবে তারে ডাক দিয়ে নিয়ে গেলো যৌবন সুচতুর, 
 কবে তারে ডেকে নিলো মলিন ইটের কালো সভ্যতা! 

 সবুজ ছায়ার নিচে ঘুমে চোখ ঢুলে এলে 
 মা যাকে শোনাতো সেই তুষারদেশের কথা, 
 তার চোখে আজ এতো রাতজাগা ক্লান্তির শোক! 

 পেছনে তাকালে কেন নিরবতা আসে চোখে! 
 মনে পড়ে-জ্যোৎস্নায় ঝলোমলো বালুচর, 
 একটি কিশোর- তার তন্ময় দুটি চোখে 
 রাশি রাশি কালোজল- সুদূরের মাস্তুল 
 মনে পড়ে!

১০. কথা ছিলো সুবিনয়
   রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ


কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত, 
 রাখালেরা পুনর্বার বাঁশিতে আঙুল রেখে 
 রাখালিয়া বাজাবে বিশদ। 
 কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না, 
 চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না 
 রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট। 

 কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম। 
 নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ, 
 কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন। 

 অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল, 
 রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ, 
 বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই- 

 কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো। 
 একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে 
 সহজিয়া বাউলেরা, 
 তাদের মায়াবী আঙুলের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়- 
 একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি। 

 কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে 
 আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরণ্য, জমিন, আমাদের 
 পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল- 
 আজন্ম এ-জলাভূমি খুঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার। 

 কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে। 
 অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের 
 ধারাবাহিকতা 
 কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ। 

 মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে 
 আর্য বণিকের হাত। 

 আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব 
 লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা, 
 প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়। 

 কথা ছিলো আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন 
 আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ। 
 অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু 
 অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে। 
 জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি, 
 আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।

পরবর্তী  কবিতা পেতে সাথে থাকুন।ধন্যবাদ...!

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.