কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর কবিতা-সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। Technical Bangla পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-১৬: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর লেখা ১২ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. যত দূরেই যাই
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমি যত দূরেই যাই
আমার সংগে যায়
ঢেউয়ের মালা-গাঁথা
এক নদীর নাম_
আমি যত দূরেই যাই।
আমার চোখের পাতায় লেগে থাকে
নিকোনো উঠোনে
সারি সারি
লক্ষ্মীর পা
আমি যত দূরেই যাই।
২. মে-দিনের কবিতা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।
প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,
মারণের পণ নখদন্তে;
বন্ধন ঘুচে যাবে জাগবার ছন্দে,
উজ্জ্বল দিন দিক্-অন্তে।
শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না -
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা।।
৩. পায়ে পায়ে
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সারাক্ষণ
সে আমার পায়ে পায়ে
সারাক্ষণ
পায়ে পায়ে
ঘুরঘুর করে।
তাকে বলিঃ তোমাকে নিয়ে থাকার
সময় নেই-
হে বিষাদ, তুমি যাও
এখন সময় নেই
তুমি যাও।
গাছের গুঁড়িতে বুক-পিঠ এক করে
যৌবনে পা দিয়ে রয়েছে
একটি উলঙ্গ মৃত্যু-
আমি এখুনি দেখে আসছিঃ
পৃথিবীতে গাঁক-গাঁক করে ফিরছে
যে দাঁত-খিঁচানো ভয়,
আমি তার গায়ের চামড়াটা
খুলে নিতে চাই।
চেয়ে দেখো হে বিষাদ-
একটু সুখের মুখ দেখবে বলে
আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
চুল সাদা করে আহম্মদের মা।
হে বিষাদ,
তুমি আমার হাতের কাছ থেকে সরে যাও
জল আর কাদায় ধান রুইতে হবে।
হে বিষাদ,
হাতের কাছ থেকে সরে যাও
আগাছাগুলো নিড়োতে হবে।
যায় না;
বিষাদ তবু যায় না।
সারাক্ষণ আমার পায়ে পায়ে
সারাক্ষণ
পায়ে পায়ে
ঘুরঘুর করে।
আমি রাগে অন্ধ হই
আমার বেদনাগুলো তার দিকে
ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারি।
বলিঃ শয়তান, তোকে যমে নিলে
আমি বাঁচি!
তারপর কখন
কাজের মধ্যে ডুবে গিয়েছি জানি না-
চেয়ে দেখি
দূরে বসে সেই আমার বিষাদ
আমাকে একেবারে ভুলে গিয়ে
আমার অপূর্ণ বাসনাগুলো নিয়ে খেলছে।
হাসতে হাসতে আমি তাকে
দুরন্ত শিশুর মতো
কোলে তুলে নিই।
৪. প্রস্তাব ১৯৪০
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রভু, যদি বলো অমুক রাজার সাথে লড়াই
কোনো দ্বিরুক্তি করব না, নেব তীরধনুক।
এমনি বেকার, মৃত্যুকে ভয় করি থোড়াই,
দেহ না চললে, চলবে তোমার কড়া চাবুক।
হা-ঘরে আমরা, মুক্ত আকাশ ঘর-বাহির।
হে প্রভু, তুমিই শেখালে পৃথিবী মায়া কেবল-
তাই তো আজকে নিয়েছি মন্ত্র উপবাসীর,
ফলে নেই লোভ, তোমার গোলায় তুলি ফসল।
হে সওদাগর, সেপাই-সান্ত্রী সব তোমার।
দয়া ক'রে শুধু মহামানবের বুলি ছড়াও--
তারপরে, প্রভু, বিধির করুণা আছে অপার।
জনগণমতে বিধিনিষেধের বেড়ি পরাও।
অস্ত্র মেলে নি এতদিন, তাই ভেঁজেছি তান।
অভ্যাস ছিল তীরধনুকের ছেলেবেলায়।
শত্রুপক্ষ যদি আচমকা ছোঁড়ে কামান--
বলব, বৎস! সভ্যতা যেন থাকে বজায়।
চোখ বুজে কোনো কোকিলের দিকে ফেরাব কান।।
৫. হিংসে
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
যাবার আগে মিটিয়ে নেব
যার যার সঙ্গে আড়ি
উঠলে ঝড় ছুটব বাইরে
তারপরে তো বাড়ি
ঠিক করি নি কিসে যাব
হেঁটে না সাইকেলে
ঝনঝনালে পকেটে পয়সা
মাটিতে দেব ফেলে
মাটি কাঁপছে, কাঁপুক।
চল্ রে ঘোড়া!
হাতে তুলেছি চাবুক
মুখপুড়িটা তাকাচ্ছে, দ্যাখ।
বলছে, আ মর মিন্সে-
ও কিছু নয়, বুঝ্লি না রে
হিংসে, হিংসে, হিংসে।।
৬. চিরকুট
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
শতকোটি প্রণামান্তে
হুজুরে নিবেদন এই_
মাপ করবেন খাজনা এ সন
ছিটেফোঁটাও ধান নেই।
মাঠেঘাটে কপাল ফাটে
দৃষ্টি চলে যত দূর
খাল শুক্নো বিল শুক্নো
চোখের কোলে সমুদ্দুর।
হাত পাতব কার কাছে কে
গাঁয়ে সবার দশা এক
তিন সন্ধে উপোস দিয়ে
খাচ্ছি আজ বুনো শাক।
পরনে যা আছে তাতে
ঢাকা যায় না লজ্জা
ঘটি বাটি বেচেছি সব
আছে বলতে ছিল যা।
এ দুর্দিনে পাওনা আদায়
বন্ধ রাখুন, মহারাজ
ভিটেতে হাত দেয় না যেন
পাইক বরকন্দাজ।
আমরা কয়েক হাজার প্রজা
বাস করি এই মৌজায়
সবাই মিলে পথ খুঁজছি
কেমন করে বাঁচা যায়।
পেত জ্বলছে, ক্ষেত জ্বলছে
হুজুর, জেনে রাখুন
খাজনা এবার মাপ না হলে
জ্ব’লে উঠবে আগুন।
৭. এখন ভাবনা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
১.
এখন একটু চোখে চোখে রাখো-
দিনগুলো ভারি দামালো;
দেখো,
যেন আমাদরে অসাবধানে
এই দামালো দিনগুলো
গড়াতে গড়াতে
গড়াতে গড়াতে
আগুনের মধ্যে না পড়ে।
আমার ভালোবাসাগুলোকে নিয়েই
আমার ভাবনা।
এখন সেই বয়স, যখন
দূরেরটা বিলক্ষণ স্পষ্ট–
শুধু কাছেরটাই ঝাপসা দেখায়।
এখন সেই বয়েস, যখন
আচমকা মাটিতে
প’ড়ে যেতে যেতে মনে হয়
হাতে একটা শক্ত লাঠি থাকলে ভালো হত।
২.
পিছনে তাকালে আজও দেখতে পাই -
সিংহের কালো কেশর ফুলিয়ে
গর্জমান সমুদ্র;
দেয়ালে গুলির দাগ,
ভাঙা শ্লেট, ছেঁড়া জুতোয়
ছত্রাকার রাস্তা,
পায়ে পায়ে ছিটিয়ে যাওয়া রক্ত।
মুক্তির বহুবর্ণ বাসনার নিচে
যৌবনকে পণ ধরেছিল জীবন।
ঠিক তেমনি দূরে,
কত দূরে ঠিক জানি না,
আজও দেখতে পাচ্ছি-
হিরণ্যগর্ভ দিন
হাতে লক্ষ্মীর ঝাঁপি নিয়ে আসছে।
গান গেয়ে
আমাকে বলছে দাঁড়াতে।
গুচ্ছ গুচ্ছ ধানের মধ্যে দাঁড়িয়ে
তার বলিষ্ঠ হাত দুটো আমি দেখতে পাচ্ছি-
আমি শেষ বারের মত
মাটিতে প’ড়ে যাবার আগে
আমার ভালোবাসাগুলোকে
নিরাপদে তার হাতে
পৌঁছে দিতে চাই।
৮. আলালের ঘরের দুলাল
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে
পায়ে শিকল দিয়ে কোকিল
মরছে কেশে কেশে
এ গাঁয়েতে বান তো
ও গাঁয়েতে খরা
যে করে হোক আখেরে ভোট
ভাতের টোপে ধরা
নীচেয় থাকে হাবা বোবা
ওপরতলায় কালা
কাজের জন্যে মানুষ হন্যে
দরজাগুলোয় তালা
এই এটাকে চেয়ারে বসা
ওই ওটাকে হটা
সামনে পুলুশ পিছনে জুলুশ
তবে না ঘটাপটা
খুনখারাবি রং বুলিয়ে
মন ভুলিয়ে ঝান্ডায়
চাইবে গদি না দাও যদি
ঠান্ডা করবে ডান্ডায়
বাড়ির পর বাড়ি রে ভাই
গাড়ির পর গাড়ি
আপনজনে পরের ধনে
চালাচ্ছে পোদ্দারি
পার্ক ময়দানে জলা জমি
হাত করছে টাকার কুমির
ছিল নাকে কপর্দকও, তোমন লোকও
লাল হয়ে আজ হচ্ছে আমির
বাইরে চটক ভেতরে ফাঁপা
কতদিন আর থাকবে চাপা
হাটে ভাঙছে হাঁড়ি এখন পর পর
একটু যদি দাঁড়ান ঘুরে
দেখতে পাবেন রাজ্য জুড়ে
বেঁধে যায় কি চব্বর
ছাড়ায় সীমা সহ্যের
এতদিন যা হয়ে এসেছে
এসব আজ তার জের।।
৯. সকলের গান
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
কমরেড, আজ নতুন নবযুগ আনবে না?
কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে।
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা-
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
আকাশের চাঁদ দেয় বুঝি হাতছানি?
ওসব কেবল বুর্জোয়াদের মায়া-
আমরা তো নই প্রজাপতি- সন্ধানী!
অন্তত, আজ মাড়াই না তার ছায়া।
কুঁজো হয়ে যারা ফুলের মূর্ছা দেখে
পৌঁছোয় না কি হাতুড়ি তাদের পিঠে?
কিংবা পাঠিয়ো বনে সে-মহাত্মাকে
নিশ্চয় নিঃসঙ্গ লাগবে মিঠে!
আমাদের থাক মিলিত অগ্রগতি;
একাকী চলতে চাই না এরোপ্লেনে;
আপাতত চোখ থাক পৃথিবীর প্রতি,
শেষে নেওয়া যাবে শেষকার পথ জেনে।।
১০. পরপার
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমরা যেন বাংলাদেশের
চোখের দুটি তারা।
মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে_
থাকুক গে পাহারা।
দুয়োরে খিল।
টান দিয়ে তাই
খুলে দিলাম জানলা।
ওপারে যে বাংলাদেশ
এপারেও সেই বাংলা।।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-১৬: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর লেখা ১২ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. যত দূরেই যাই
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমি যত দূরেই যাই
আমার সংগে যায়
ঢেউয়ের মালা-গাঁথা
এক নদীর নাম_
আমি যত দূরেই যাই।
আমার চোখের পাতায় লেগে থাকে
নিকোনো উঠোনে
সারি সারি
লক্ষ্মীর পা
আমি যত দূরেই যাই।
২. মে-দিনের কবিতা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।
প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,
মারণের পণ নখদন্তে;
বন্ধন ঘুচে যাবে জাগবার ছন্দে,
উজ্জ্বল দিন দিক্-অন্তে।
শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না -
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা।।
৩. পায়ে পায়ে
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সারাক্ষণ
সে আমার পায়ে পায়ে
সারাক্ষণ
পায়ে পায়ে
ঘুরঘুর করে।
তাকে বলিঃ তোমাকে নিয়ে থাকার
সময় নেই-
হে বিষাদ, তুমি যাও
এখন সময় নেই
তুমি যাও।
গাছের গুঁড়িতে বুক-পিঠ এক করে
যৌবনে পা দিয়ে রয়েছে
একটি উলঙ্গ মৃত্যু-
আমি এখুনি দেখে আসছিঃ
পৃথিবীতে গাঁক-গাঁক করে ফিরছে
যে দাঁত-খিঁচানো ভয়,
আমি তার গায়ের চামড়াটা
খুলে নিতে চাই।
চেয়ে দেখো হে বিষাদ-
একটু সুখের মুখ দেখবে বলে
আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
চুল সাদা করে আহম্মদের মা।
হে বিষাদ,
তুমি আমার হাতের কাছ থেকে সরে যাও
জল আর কাদায় ধান রুইতে হবে।
হে বিষাদ,
হাতের কাছ থেকে সরে যাও
আগাছাগুলো নিড়োতে হবে।
যায় না;
বিষাদ তবু যায় না।
সারাক্ষণ আমার পায়ে পায়ে
সারাক্ষণ
পায়ে পায়ে
ঘুরঘুর করে।
আমি রাগে অন্ধ হই
আমার বেদনাগুলো তার দিকে
ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারি।
বলিঃ শয়তান, তোকে যমে নিলে
আমি বাঁচি!
তারপর কখন
কাজের মধ্যে ডুবে গিয়েছি জানি না-
চেয়ে দেখি
দূরে বসে সেই আমার বিষাদ
আমাকে একেবারে ভুলে গিয়ে
আমার অপূর্ণ বাসনাগুলো নিয়ে খেলছে।
হাসতে হাসতে আমি তাকে
দুরন্ত শিশুর মতো
কোলে তুলে নিই।
৪. প্রস্তাব ১৯৪০
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রভু, যদি বলো অমুক রাজার সাথে লড়াই
কোনো দ্বিরুক্তি করব না, নেব তীরধনুক।
এমনি বেকার, মৃত্যুকে ভয় করি থোড়াই,
দেহ না চললে, চলবে তোমার কড়া চাবুক।
হা-ঘরে আমরা, মুক্ত আকাশ ঘর-বাহির।
হে প্রভু, তুমিই শেখালে পৃথিবী মায়া কেবল-
তাই তো আজকে নিয়েছি মন্ত্র উপবাসীর,
ফলে নেই লোভ, তোমার গোলায় তুলি ফসল।
হে সওদাগর, সেপাই-সান্ত্রী সব তোমার।
দয়া ক'রে শুধু মহামানবের বুলি ছড়াও--
তারপরে, প্রভু, বিধির করুণা আছে অপার।
জনগণমতে বিধিনিষেধের বেড়ি পরাও।
অস্ত্র মেলে নি এতদিন, তাই ভেঁজেছি তান।
অভ্যাস ছিল তীরধনুকের ছেলেবেলায়।
শত্রুপক্ষ যদি আচমকা ছোঁড়ে কামান--
বলব, বৎস! সভ্যতা যেন থাকে বজায়।
চোখ বুজে কোনো কোকিলের দিকে ফেরাব কান।।
৫. হিংসে
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
যাবার আগে মিটিয়ে নেব
যার যার সঙ্গে আড়ি
উঠলে ঝড় ছুটব বাইরে
তারপরে তো বাড়ি
ঠিক করি নি কিসে যাব
হেঁটে না সাইকেলে
ঝনঝনালে পকেটে পয়সা
মাটিতে দেব ফেলে
মাটি কাঁপছে, কাঁপুক।
চল্ রে ঘোড়া!
হাতে তুলেছি চাবুক
মুখপুড়িটা তাকাচ্ছে, দ্যাখ।
বলছে, আ মর মিন্সে-
ও কিছু নয়, বুঝ্লি না রে
হিংসে, হিংসে, হিংসে।।
৬. চিরকুট
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
শতকোটি প্রণামান্তে
হুজুরে নিবেদন এই_
মাপ করবেন খাজনা এ সন
ছিটেফোঁটাও ধান নেই।
মাঠেঘাটে কপাল ফাটে
দৃষ্টি চলে যত দূর
খাল শুক্নো বিল শুক্নো
চোখের কোলে সমুদ্দুর।
হাত পাতব কার কাছে কে
গাঁয়ে সবার দশা এক
তিন সন্ধে উপোস দিয়ে
খাচ্ছি আজ বুনো শাক।
পরনে যা আছে তাতে
ঢাকা যায় না লজ্জা
ঘটি বাটি বেচেছি সব
আছে বলতে ছিল যা।
এ দুর্দিনে পাওনা আদায়
বন্ধ রাখুন, মহারাজ
ভিটেতে হাত দেয় না যেন
পাইক বরকন্দাজ।
আমরা কয়েক হাজার প্রজা
বাস করি এই মৌজায়
সবাই মিলে পথ খুঁজছি
কেমন করে বাঁচা যায়।
পেত জ্বলছে, ক্ষেত জ্বলছে
হুজুর, জেনে রাখুন
খাজনা এবার মাপ না হলে
জ্ব’লে উঠবে আগুন।
৭. এখন ভাবনা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
১.
এখন একটু চোখে চোখে রাখো-
দিনগুলো ভারি দামালো;
দেখো,
যেন আমাদরে অসাবধানে
এই দামালো দিনগুলো
গড়াতে গড়াতে
গড়াতে গড়াতে
আগুনের মধ্যে না পড়ে।
আমার ভালোবাসাগুলোকে নিয়েই
আমার ভাবনা।
এখন সেই বয়স, যখন
দূরেরটা বিলক্ষণ স্পষ্ট–
শুধু কাছেরটাই ঝাপসা দেখায়।
এখন সেই বয়েস, যখন
আচমকা মাটিতে
প’ড়ে যেতে যেতে মনে হয়
হাতে একটা শক্ত লাঠি থাকলে ভালো হত।
২.
পিছনে তাকালে আজও দেখতে পাই -
সিংহের কালো কেশর ফুলিয়ে
গর্জমান সমুদ্র;
দেয়ালে গুলির দাগ,
ভাঙা শ্লেট, ছেঁড়া জুতোয়
ছত্রাকার রাস্তা,
পায়ে পায়ে ছিটিয়ে যাওয়া রক্ত।
মুক্তির বহুবর্ণ বাসনার নিচে
যৌবনকে পণ ধরেছিল জীবন।
ঠিক তেমনি দূরে,
কত দূরে ঠিক জানি না,
আজও দেখতে পাচ্ছি-
হিরণ্যগর্ভ দিন
হাতে লক্ষ্মীর ঝাঁপি নিয়ে আসছে।
গান গেয়ে
আমাকে বলছে দাঁড়াতে।
গুচ্ছ গুচ্ছ ধানের মধ্যে দাঁড়িয়ে
তার বলিষ্ঠ হাত দুটো আমি দেখতে পাচ্ছি-
আমি শেষ বারের মত
মাটিতে প’ড়ে যাবার আগে
আমার ভালোবাসাগুলোকে
নিরাপদে তার হাতে
পৌঁছে দিতে চাই।
৮. আলালের ঘরের দুলাল
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে
পায়ে শিকল দিয়ে কোকিল
মরছে কেশে কেশে
এ গাঁয়েতে বান তো
ও গাঁয়েতে খরা
যে করে হোক আখেরে ভোট
ভাতের টোপে ধরা
নীচেয় থাকে হাবা বোবা
ওপরতলায় কালা
কাজের জন্যে মানুষ হন্যে
দরজাগুলোয় তালা
এই এটাকে চেয়ারে বসা
ওই ওটাকে হটা
সামনে পুলুশ পিছনে জুলুশ
তবে না ঘটাপটা
খুনখারাবি রং বুলিয়ে
মন ভুলিয়ে ঝান্ডায়
চাইবে গদি না দাও যদি
ঠান্ডা করবে ডান্ডায়
বাড়ির পর বাড়ি রে ভাই
গাড়ির পর গাড়ি
আপনজনে পরের ধনে
চালাচ্ছে পোদ্দারি
পার্ক ময়দানে জলা জমি
হাত করছে টাকার কুমির
ছিল নাকে কপর্দকও, তোমন লোকও
লাল হয়ে আজ হচ্ছে আমির
বাইরে চটক ভেতরে ফাঁপা
কতদিন আর থাকবে চাপা
হাটে ভাঙছে হাঁড়ি এখন পর পর
একটু যদি দাঁড়ান ঘুরে
দেখতে পাবেন রাজ্য জুড়ে
বেঁধে যায় কি চব্বর
ছাড়ায় সীমা সহ্যের
এতদিন যা হয়ে এসেছে
এসব আজ তার জের।।
৯. সকলের গান
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
কমরেড, আজ নতুন নবযুগ আনবে না?
কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে।
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা-
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
আকাশের চাঁদ দেয় বুঝি হাতছানি?
ওসব কেবল বুর্জোয়াদের মায়া-
আমরা তো নই প্রজাপতি- সন্ধানী!
অন্তত, আজ মাড়াই না তার ছায়া।
কুঁজো হয়ে যারা ফুলের মূর্ছা দেখে
পৌঁছোয় না কি হাতুড়ি তাদের পিঠে?
কিংবা পাঠিয়ো বনে সে-মহাত্মাকে
নিশ্চয় নিঃসঙ্গ লাগবে মিঠে!
আমাদের থাক মিলিত অগ্রগতি;
একাকী চলতে চাই না এরোপ্লেনে;
আপাতত চোখ থাক পৃথিবীর প্রতি,
শেষে নেওয়া যাবে শেষকার পথ জেনে।।
১০. পরপার
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমরা যেন বাংলাদেশের
চোখের দুটি তারা।
মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে_
থাকুক গে পাহারা।
দুয়োরে খিল।
টান দিয়ে তাই
খুলে দিলাম জানলা।
ওপারে যে বাংলাদেশ
এপারেও সেই বাংলা।।
১১. লোকটা জানইল না
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে
হায়! হায়! লোকটার ইহকাল পরকাল গেল!
অথচ আর একটু নীচে হাত দিলেই
সে পেতো আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপ,
তার হৃদয়!
লোকটা জানলোই না!
তার কড়ি গাছে কড়ি হল।
লক্ষ্মী এল রণ-পায়ে
দেয়াল দিল পাহাড়া
ছোটলোক হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে!
তারপর একদিন
গোগ্রাসে গিলতে গিলতে
দু’আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে-
কখন খসে পড়েছে তার জীবন-
লোকটা জানলই না!
১২. বলছিলাম কী
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বলছিলাম–
না, থাক্ গে।
যা হচ্ছে হোক, কে খণ্ডাবে
লেখা থাকলে ভাগ্যে।
পাকানো জট,
হারানো খেই,
চতুর্দিকের দৃষ্যপট
এখনও সে-ই–
শক্ত করে আঁকড়ে-ধরা
চেয়ারের সেই হাতল।
বিষম ভয়, কখন হয়
ক্ষমতার হাতবদল।
বলছিলাম–
না, থাক্ গে!
কী আসে যায় হাতে নাতে
প্রমাণ এবং সাক্ষ্যে।
মোড়লেরা ব্যস্ত বেজায়
যে যার কোলে ঝোল টানতে।
সারটা দেশ হাপিত্যেশে,
পান্তা ফুরোয় নুন আনতে।
চোর-বাটপার
সাধুর ভেখে
ফাঁদে কারবার
আড়াল থেকে–
হাতিয়ে জমি, বানিয়ে বাড়ি
করছে টাকা কাঁড়ি কাঁড়ি
কতক সাদা কতক কালো
মারছে কার খোরাক কে।
জানি না যখন কোনো কিছুই
বলাই ভালো
জী-আজ্ঞে।
বলছিলাম কী–
থাক্ গে।
আমাদের এই কবিতা গুলো কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর অনেক কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
পরবর্তী পর্বের পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
No comments