কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা-সমূহ - TECHNICAL BANGLA

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা-সমূহ

আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,?? Technical Bangla পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-১৫: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর লেখা ১০ টি কবিতা গুলো সবাই মনযোগ দিয়ে পড়বেন।

চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো- 

১.      ভালোবাসা
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


ভালোবাসা নয় স্তনের ওপরে দাঁত? 
 ভালোবাসা শুধু শ্রাবণের হা-হুতাশ? 
 ভালোবাসা বুঝি হৃদয় সমীপে আঁচ? 
 ভালোবাসা মানে রক্ত চেটেছে বাঘ! 

 ভালোবাসা ছিল ঝর্ণার পাশে একা 
 সেতু নেই আকাশে পারাপার 
 ভালাবাসা ছিল সোনালি ফসলে হওয়া 
 ভালোবাসা ছিল ট্রেন লাইনের রোদ। 

 শরীর ফুরোয় ঘামে ভেসে যায় বুক 
 অপর বহুতে মাথা রেখে আসে ঘুম 
 ঘুমের ভিতরে বারবার বলি আমি 
 ভালোবাসাকেই ভালবাসা দিয়ে যাবো।

২.      প্রতীক্ষায়
     সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


গোলাপে রয়েছে আঁচ, পতঙ্গের ডানা পুড়ে যায় 
 হাওয়া ঘোরে দূরে-দূরে 
 ফুলকে সমীহ করে 
 সূর্যাস্তও থমকে থাকে! 
 দেখো-দেখো 
 আমার বাগানে এক অগ্নিময় 
 ফুল ফুটে আছে 
 তার সৌরভেও কত তাপ! 
 আর সব কুসুমের জীবন-চরিত তুচ্ছ করে 
 সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে চতুর্দিক 
 বৈদুর্ষমণির মতো চোখ মেলে সে রয়েছে        প্রতীক্ষায় 
 কার? কার?


৩.        কবিতা
       সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্নে দেখেছি যে তুমি 
 তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো 
 এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার 
 এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয় 
 সেখানে চুম্বন দেবার?… 
 আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তো 
 আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না 
 আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সব 
 রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত…… 
 আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম…… 
 আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি, 
 কথা বলেছি। 
 শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে…… 


৪.   শুধু কবিতার জন্য
     সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার 
 জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা 
 ভুবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য 
 অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক; 
 শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু 
 কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত 
 শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়। 
 মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু 
 কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।

৫. নীরার পাশে তিনটি ছায়া
       সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


নীরা এবং নীরার পাশে তিনটি ছায়া  
 আমি ধনুকে তীর জুড়েছি, ছায়া তবুও এত বেহায়া  
 পাশ ছাড়ে না  
 এবার ছিলা সমুদ্যত, হানবো তীর ঝড়ের মতো–  
 নীরা দু’হাত তুলে বললো, ‘মা নিষাদ!  
 ওরা আমার বিষম চেনা!’  
 ঘূর্ণি ধুলোর সঙ্গে ওড়ে আমার বুক চাপা বিষাদ–  
 লঘু প্রকোপে হাসলো নীরা, সঙ্গে ছায়া-অভিমানীরা  
 ফেরানো তীর দৃষ্টি ছুঁয়ে মিলিয়ে গেল  
 নীরা জানে না! 

৬.        কথা আছে
         সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু  
 আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে  
 পুরোনো পত্রিকা  
 প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে  
 দুটি পা-ই ঢাকা  
 এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি  
 ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু  
 মসৃণ নগ্নতা  
 বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়  
 কারা ফিরে আসে  
 বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।  
 আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী  
 দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট  
 অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না  
 আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম  
 ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,  
 সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে  
 অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে। 

৭.      নিজের আড়ালে
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে  
 মানুষ দেখে না  
 সে খোঁজে ভ্রমর কিংবা  
 দিগন্তের মেঘের সংসার  
 আবার বিরক্ত হয়  
 কতকাল দেখে না আকাশ  
 কতকাল নদী বা ঝরনায় আর  
 দেখে না নিজের মুখ  
 আবর্জনা, আসবাবে বন্দী হয়ে যায়  
 সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে।  
  
 রমনীর কাছে গিয়ে  
 বারবার হয়েছে কাঙাল  
 যেমন বাতাসে থাকে সুগন্ধের ঋণ  
 বহু বছরের স্মৃতি আবার কখন মুছে যায়  
 অসম্ভব অভিমান খুন করে পরমা নারীকে  
 অথবা সে অস্ত্র তোলে নিজেরই বুকের দিকে  
 ঠিক যেন জন্মান্ধ তখন  
 সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে।। 

৮.        আমাকে জড়িয়ে
           সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


হে মৃত্যুর মায়াময় দেশ, হে তৃতীয় যামের অদৃশ্য আলো  
 তোমাদের অসম্পূর্ণতা দেখে, স্মৃতির কুয়াশা দেখে আমার মন কেমন করে  
 সারা আকাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক পরম কারুণিক নিষাদ  
 তার চোখ মেটে সিঁদুরের মতো লাল, আমি জানি তার দুঃখ  
 হে কুমারীর বিশ্বাসহন্তা, হে শহরতলীর ট্রেনের প্রতারক  
 তোমাদের টুকিটাকি সার্থকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরোনো মাছের আঁশ  
 হে উত্তরের জানালার ঝিল্লি, হে মধ্য সাগরের অবিযাত্রী মেঘদল  
 হে যুদ্ধের ভাষ্যকার, হে বিবাগী, হে মধ্যরয়সের স্বপ্ন, হে জন্ম  
 এত অসময় নিয়ে, এমন তৃষ্ণার্ত হাসি, এমন করুণা নিয়ে  
 কেন আমাকে জড়িয়ে রইলে,  
 কেন আমাকে।


৯.      প্রেমিকা
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করে  
 ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায়  
 ছাদের ঘরে  
 কবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেক  
 হঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে!  
 কবিতাকে আমি ভুলে থাকি যদি  
 অমনি সে রেগে হঠাৎ আমায়  
 ডবল ডেকার বাসের সামনে ঠেলে ফেলে দেয়  
 আমার অসুখে শিয়রের কাছে জেগে বসে থাকে  
 আমার অসুখ কেড়ে নেওয়া তার প্রিয় খুনসুটি  
 আমি তাকে যদি  
 আয়নার মতো  
 ভেঙ্গে দিতে যাই  
 সে দেখায় তার নগ্ন শরীর  
 সে শরীর ছুঁয়ে শান্তি হয় না, বুক জ্বলে যায়  
 বুক জ্বলে যায়, বুক জ্বলে যায়। 
  

১০. জয়ী নই পরাজিত নই
       সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


পাহাড়-চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল  
 আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি  
 এই আক্ষরিক সত্যের কছে যুক্তি মূর্ছা যায়।  
 শিহরিত নির্জনতার মধ্যে বুক টন্টন করে ওঠে  
 হাল্কা মেঘের উপচ্ছায়ায় একটি ম্লান দিন  
 সবুজকে ধূসর হতে ডাকে  
 আ-দিগন্ত প্রান্তের ও টুকরো ছড়ানো টিলার উপর দিয়ে  
 ভেসে যায় অনৈতিহাসিক হাওয়া  
 অরণ্য আনে না কোনো কস্তুরীর ঘ্রাণ  
 কিছু নিচে ছুটন্ত মহিলার গোলাপি রুমাল উড়ে গিয়ে পড়ে  
 ফণমনসার ঝোপে  
 নিঃশব্দ পায়ে চলে যায় খরগোশ আর রোদ্দুর।  
  
 এই যে মুহূর্তে, এই যে দাঁড়িয়ে থাকা–এর কোনো অর্থ নেই  
 ঝর্নার জলে ভেসে যায় সম্রাটের শিরস্ত্রাণ  
 কমলার কোয়া থেকে খসে পড়া বীজ ঢুকে পড়ে পাতাল গর্ভে  
 পোল্কা ডট্ দুটি প্রজাপতি তাদের আপন আপন কাজে ব্যস্ত  
 বাব্লা গাছের শুক্নো কাঁটাও দাবী করেছে প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব।  
 সব দৃশ্যই এমন নিরপেক্ষ  
 আমি জয়ী নই, আমি পরাজিত নই, আমি এমনই একজন মানুষ  
 পাহাড় চূড়ায় পৃথিবীকে পদতলে রেখে, আমার নাভিমূল  
 থেকে উঠে আসে বিষণ্ন, ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস  
 এই নির্জনতাই আমার ক্ষমাপ্রার্থী অশ্রুমোচনের মুহূর্ত।। 

১১.   যদি নির্বাসন দাও
     সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো  
 আমি বিষপান করে মরে যাবো।  
 বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ  
 নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ  
 প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-  
 এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূম  
 যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো  
 আমি বিষপান করে মরে যাবো।  
 ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত  
 এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম  
 এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম  
 এখনো নদীর বুকে  
 মোচার খোলায় ঘুরে  
 লুঠেরা, ফেরারী।  
 শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি  
 বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর,  
 বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা  
 বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা  
 বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা  
 বুলেট ও বিস্পোরণ  
 শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ  
 রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল–  
 এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি  
 যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো  
 আমি বিষপান করে মরে যাবো।  
  
 কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে  
 নিথর দীঘির পারে বসে আছে বক  
 আমি কি ভুলেছি সব  
 স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?  
 আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে  
 শিমুল তুলার ওড়াওড়ি?  
 মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে  
 শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি  
 নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ  
 শুনিনি কি দুপুরে চিলের  
 তীক্ষ্ণ স্বর?  
 বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ…  
 এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি  
 যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো  
 আমি বিষপান করে মরে যাবো…। 

১২.  সেদিন বিকেলবেলা
         সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



সাতশো একান্নতম আনন্দটি পেয়েছি সেদিন  
 যখন বিকেলবেলা মেঘ এসে  
 ঝুঁকে পড়েছিল  
 গোলাপ বাগানে  
 এবং তোমার পায়ে ফুটে গেল লক্ষ্মীছাড়া কাঁটা!  
 তখন বাতাসে ছিল বিহ্বলতা, তখন আকাশে  
 ছিল কৃষ্ণক্লান্তি আলো,  
 ছিল না রঙের কোলাহল  
 ছিল না নিষেধ-  
 অতটুকু ওষ্ঠ থিকে অতখানি হাসির ফোয়ারা  
 মন্দিরের ভাস্কর্যকে ম্লান করে নতুন দৃশ্যটি।  
  
 এর পরই বৃষ্টি আসে সাতশো বাহান্ন সঙ্গে নিয়ে  
 করমচা রঙের হাত, চিবুকের রেখা  
 চোখে চোখ  
 গোলাপ সৌরভ মেশা প্রতিটি নি:শ্বাস, যত্ন করে  
 জমিয়ে রাখার মতো-  
 সম্প্রতি ওল্টানো পদতলে  
 এত মায়া, বায়ু ধায় ন’শো ঊনপঞ্চাশের দিকে  
 নগ্ন প্রকৃতির  
 এত কাছাকাছি আর কখনো আসি নি মনে হয়  
 জীবন্ত কাঁটার কাছে হেরে যায় গোপন ঈশ্বর  
 রূপের সহস্র ছবি, বা আনন্দ একটি শরীরে?

 ১৩.      নারী
   সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


নাস্তিকেরা তোমায় মানে না, নারী  
 দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো তুমি চুল মেলে  
 বিপ্লবের শত্রু হয়ে আছো!  
 এমনকি অদৃশ্য তুমি বহু চোখে  
 কত লোক নামই শোনেনি  
 যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে  
 জল-রং-আলো-  
  
 তারা চেনে প্রেমিকা বা সহোদরা  
 জননী বা জায়া  
 দুধের দোকানের মেয়ে, কিংবা যারা  
 নাচে গায়  
 রান্নাঘরে ঘামে  
 শিশুকোলে চৌরাস্তায় বাড়ায় কঙ্কাল হাত  
 ফ্রক কিংবা শাড়ি পরে দু:খের ইস্কুলে যায়  
 মিস্তিরির পাশে থেকে সিমেন্টে মেশায় কান্না  
 কৌটো হাতে পরমার্থ চাঁদা তোলে  
 কৃষকের পান্তাভাত পৌছে দেয় সূর্য ক্রুদ্ধ হলে  
 শিয়রের কাছে রেখে উপন্যাস  
 দুপুরে ঘুমোয়  
 এরা সব ঠিকঠাক আছে  
 এদের সবাই চেনে শয়নে, শরীরে  
 দু:খ বা সুখের দিনে  
 অচির সঙ্গিনী  
  
 কিন্তু নারী? সে কোথায়?  
 চল্লিশ শতাব্দী ধরে অবক্ষয়ী কবি-দল  
 যাকে নিয়ে এমন মেতেছে  
  
 সে কোথায়? সে কোথায়?  
 দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো চুল মেলে  
 সে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে?  
  
 এ ভিড়ে কেমন গোপন থাকো তুমি  
 যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে  
 জল-রং-আলো।

১৪.     এই জীবন
         সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


ফ্রয়েড ও মার্ক্স নামে দুই দাড়িওয়ালা  
 বলে গেল, মানুষেরও রয়েছে সীমানা  
 এঁচোড়ে পাকার মত এর পর অনেকেই চড়িয়েছে গলা  
 নৃমুন্ড শিকারী দেয় মনোলোকে হানা।   
  
 সকলেই সব জানে, এত জ্ঞানপাপী  
 বলেছে মুক্তর রং শাদা নয় খাকি  
 তবু যারা সিংহাসন নেয় তারা কথার খেলাপি  
 আবং আমার ভাই, মা-বোন নিখাকী।   
  
 ছিঁড়েছে সম্রাজ্য ঢের, নতুন বসতি  
 পুরোনো হবার আগে দুবার উল্টায়  
 দিকে দিকে গণভোটে রটে যায় বেশ্যারাও সতী  
 রং পলেস্তারা পড়ে দেয়ালের চলটায়।   
  
 এরকম চলে আসে, তবু নিরালায়  
 ছোট এক কবি বলে যাবে সিধে কথা  
 সূর্যাস্তের অগ্নিপ্রভা লেগে আছে আকাশের গায়  
 জীবনই জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা।  


১৫.      তুমি
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে  
 তোমার দুচোখে তবু ভূরুতার হিম।  
 রাত্রিময় আকাশের মিলনান্ত নীলে  
 ছোট এই পৃথিবীকে করোছো অসীম।   
  
 বেদনা মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর  
 অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না  
 তুমিই প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর  
 আবার কখনও ভাবি অপার্থিব কিনা।   
  
 সারাদিন পৃথিবীকে সূর্যের মতন  
 দুপুর-দগ্ধ পায়ে করি পরিক্রমা,  
 তারপর সায়াহ্নের মতো বিস্মরণ-  
 জীবনকে সির জানি তুমি দেবে ক্ষমা।   
  
 তোমার শরীরে তুমি গেঁথে রাখো গান  
 রাত্রিকে করেছো তাই ঝঙ্কার মুখর  
 তোমার সান্নিধ্যের অপরূপ ঘ্রাণ  
 অজান্তে জীবনে রাখে জয়ের স্বাক্ষর।   
  
 যা কিছু বলেছি আমি মধুর অস্পূটে  
 অসির অবগাহনে তোমারি আলোকে  
 দিয়েছো উত্তর তার নব-পত্রপুটে  
 বুদ্ধের মূর্তির মতো শান্ত দুই চোখে।। 



আমাদের সাথে থাকার জন্য  অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন,,,,,,,প্লিজ।আমি এখন পর্যন্ত ১৫ টা লেখকের কবিতা দিয়েছি।আশা করি আপনাদের দেয়ায় আরো দিতে পারব।
পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.