কবি আবুল হাসানের কবিতা-সমূহ - TECHNICAL BANGLA

কবি আবুল হাসানের কবিতা-সমূহ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। TECHNICAL BANGLA পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি, আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। মাঝে মাঝে
নিত্য নতুন কিছু কবিতা নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসি,,,,

হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২৩: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন।  আজকে আমি  নিয়ে এসেছি কবি আবুল হাসান এর লেখা ১০ টি কবিতা।
♦♦♦চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-

১.    মাতৃভাষা
     আবুল হাসান

আমি জানিনা দুঃখের কী মাতৃভাষা
 ভালোবাসার কী মাতৃভাষা
 বেদনার কী মাতৃভাষা
 যুদ্ধের কী মাতৃভাষা।
 আমি জানিনা নদীর কী মাতৃভাষা
 নগ্নতার কী মাতৃভাষা
 একটা নিবিড় বৃক্ষ কোন ভাষায় কথা বলেএখনো জানিনা।
 শুধু আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো
 সভ্যতার শেষ মানুষের পদশব্দ শুনি আর
 কোথাও করুণ জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে,
 আর সেই জলপতনের শব্দে সিক্ত হতে থাকে
 সর্বাঙ্গে সবুজ হতে থাকে আমার শরীর।
 সর্বাঙ্গে সবুজ আমি কোথাও ঘরের দরোজায় দাঁড়ালেই আজো
 পোষা পাখিদের কিচিরমিচির শুনি
 শিশুদের কলরব শুনি
 সুবর্ণ কঙ্কন পরা কামনার হাস্যধ্বনি শুনি!
 ঐযে নষ্ট গলি, নিশ্চুপ দরোজা
 ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, গণিকারা-
 মধ্যরাতে উলঙ্গ শয্যায় ওরা কীসের ভাষায় কথা বলে?
 ঐযে কমলা রং কিশোরীরা যাচ্ছে ইশকুলে
 আজো ঐ কিশোরীর প্রথম কম্পনে দুটি হাত রাখলে
 রক্তে স্রোত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, শব্দ হয়, শুনি
 কিন্তু আমি রক্তের কী মাতৃভাষা এখনও জানিনা!
 বেদনার কী মাতৃভাষা এখনো জানিনা!
 শুধু আমি জানি আমি একটি মানুষ,
 আর পৃথিবীতে এখনও আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা!

২. বনভূমির ছায়া
     আবুল হাসান

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাবো,
 বনভূমির ভিতরে আরো গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাবো,
 আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তেরবড় শাল গজারী পাতায়।
 আমাদের দলের ভিতরে যে দুইজন কবি
 তারা ফিরে এসে অরণ্য স্তুতি লিখবে পত্রিকায়
 কথা ছিল গল্পলেখক অরণ্য যুবতী নিয়ে গল্প লিখবে নতুন আঙ্গিকে!
 আর যিনি সিনেমা বানাবেন, কথা ছিল
 তার প্রথম থীমটি হবে আমাদের পিকনিকপ্রসূত।
 তাই সবাই আগে থেকেই ঠিকঠাক, সবাই প্রস্তুত,
 যাবার দিনে কারো ঘাড়ে ঝুললো ফ্লাস্কের বোতল
 ডেটল ও শাদা তুলো, কারো ঘাড়ে টারপুলিনের টেণ্ট, খাদ্যদ্রব্য,
 একজনের শখ জাগলো পাখির সঙ্গীত তিনি টেপরেকর্ডারে তুলে আনবেন
 বনে বনে ঘুরে ঠিক সন্ধ্যেবেলাটিতে
 তিনি তুলবেন পাতার মর্মর জোড়া পাখির সঙ্গীত!
 তাই টেপরেকর্ডার নিলেন তিনি।
 একজন মহিলাও চললেন আমাদের সঙ্গে
 তিনি নিলেন তাঁর সাথে টাটকা চিবুক, তার চোখের সুষমা আর
 উষ্ণ শরীর!
 আমাদের বাস চলতে লাগলো ক্রমাগত
 হঠাৎ এক জায়গায় এসে কী ভেবে যেনো
 আমি ড্রাইভারকে বোললুম : রোক্কো-
 শহরের কাছের শহর
 নতুন নির্মিত একটি সাঁকোর সামনে দেখলুম তীরতীর কোরছে জল,
 আমাদের সবার মুখ সেখানে প্রতিফলিত হলো;
 হঠাৎ জলের নীচে পরস্পর আমরা দেখলুম
 আমাদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অপরিসীম ঘৃণা ও বিদ্বেষ!
 আমরা হঠাৎ কী রকম অসহায় আর একা হয়ে গেলাম!
 আমাদের আর পিকনিকে যাওয়া হলো না,
 লোকালয়ের কয়েকটি মানুষ আমরা
 কেউই আর আমাদের এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব, অসহায়বোধ
 আর মৃত্যুবোধ নিয়ে বনভূমির কাছে যেতে সাহস পেলাম না!

৩. বনভূমিকে বলো
      আবুল হাসান

বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ
 লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
 হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়,
 ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ
 ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে,
 বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ
 লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
 ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায়
 ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি
 চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়,
 বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না!
 ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার
 সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না।

৪.   সেই মুখ
    আবুল হাসান


সেই সুখ মাছের ভিতরে ছিল,
 সেই সুখ মাংসের ভিতরে ছিল,
 রাতের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যেতো ছেলেবেলা
 সেই সুখ চাঁদের ভিতরে ছিল,
 সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল!
 নারী কোন রমণীকে বলে?
 যার চোখ মুখ স্তন ফুটেছে সেই রমণী কি নারী?
 সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল,
 যখন আমরা খুব গলাগলি শুয়ে
 অনু অপলাদের স্তন শরীর মুখ উরু থেকে
 অকস্মাৎ ঝিনুকের মতো যোনি,
 অর্থাৎ নারীকে আমরা যখোন খুঁজেছি
 হরিণের মতো হুররে দাঁত দিয়ে ছিঁড়েছি তাদের নখ, অন্ধকারে
 সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিল।
 যখন আমরা শীতে গলাবন্ধে পশমী চাদর জড়িয়েছি
 কিশোরীর কামরাঙা কেড়ে নিয়ে দাঁত বসিয়েছি
 সেই সুখ পশমী চাদরে ছিল, কামরাঙা কিশোরীতে ছিল!
 রঙীন বুদ্বুদ মাছ, তাজা মাংস, সুপেয় মশলার ঘ্রাণ;
 চিংড়ি মাছের ঝোল যখোন খেতাম শীতল পাটিতে বসে
 সেই সুখ শীতল পাটিতে ছিল।
 প্রথম যে কার ঠোঁটে চুমু খাই মনে নেই
 প্রথম কোনদিন আমি স্নান করি মনে নেই
 কবে কাঁচা আম নুন লঙ্কা দিয়ে খেতে খেতে
 দাঁত টক হয়েছিল মনে নেই
 মনে নেই কবে যৌবনের প্রথম মিথুন আমি ঘটিয়েছিলাম
 মনে নেই…
 যা কিছু আমার মনে নেই তাই হলো সুখ!
 আহ! সে সুখ…


৫.    স্রোতে রাজহাঁস আসছে
              আবুল হাসান


পুনর্বার স্রোতে ভাসছে হাঁস, ভাসতে দাও  
 কোমল জলের ঘ্রাণ মাখুক হাঁসেরা;  
 বহুদিন পর ওরা জলে নামছে, বহুদিন পর ওরা কাটছে সাঁতার  
 স্রোতে রাজহাঁস আসছে, আসতে দাও,  
 বহুদিন পর যেনো রোদ আসছে, আসতে দাও  
 নত হতে দাও আকাশকে,  
 আর একটু নত হোক আলো  
 আর একটু নির্জন হোক অন্ধকার!  
 আর তুমি পরে নাও তোমার গহনা, দুল  
 তোমার আঙ্গুল হোক হেমন্তের ফুল,  
 আমি শুঁকি, শুঁকতে দাও!  
 বহুদিন পর যেনো শুঁকছি বকুল!  
 বহুদিন তোমার ভিতরে যাইনা, বহুদিন বকুল ফুলের ঘ্রাণ  
 পাইনা এ মনে!  
 মনে করতে দাও তবু কোনখানে বকুলবাগান ছিল  
 গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি  
 উঁচু আসন, সিংহাসন  
 মনে করো, মনে কোরে নাও  
 আমাদেরও সিংহাসন আছে আজও  
 আমাদের হাজার দুয়ারী বাড়ি আছে  
 মাটির ময়ূর, ঠোঁটে ঠোঁট, ফুলে ফুল  
 লুকোনো ডাকবাকস আছে সবুজের কাছে  
 মনে করো আমাদেরও ভালোবাসা আছে  
 খাগের কলমে লেখা তাদের অক্ষরগুলি  
 ধানের শীষের মতো টলমলায় সেখানে শরীরে  
 তুমি মনে করো, মনে করে নাও  
 তোমার শরীরে শাড়ি,  
 গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি  
 আলো আর অন্ধকার মনে করো, মনে করে নাও  
 আমরা নৌকার জলে ভাসতে ভাসতে যেনো প্রতীকের হাঁস  
 ঐ রাজহাঁস  
 জল থেকে আরো জলে,  
 ঢেউ থেকে আরো ঢেউয়ে ছড়াতে ছড়াতে  
 পৌঁছে যাবো আগে।

৬. বৃষ্টির চিহ্নিত ভালোবাসা
           আবুল হাসান


মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল?  
  
 একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল  
 আমাদের ইস্টিশনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো  
 উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা;  
 ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায়  
 জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান।  
  
 তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং-এ  
 থিয়েটার পণ্ড হলো, এ বৃষ্টিতে সভা আর  
 তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে;  
 ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা,  
  
 সারাদিন অমুক নিপাত যাক, অমুক জিন্দাবাদ  
 অমুকের ধ্বংস চাই বলে আর হাবিজাবি হলোনা পাড়াটা।  
  
 ভদ্রশান্ত কেবল কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো  
 চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে আর  
 পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা  
 স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার!  
  
 আর ক’টি চা’খোর মানুষ এলো  
 রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে;  
 তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলা থেকে শোনা গেল:  
 কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা,  
 ডাক্তারের কাছে যাই তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই হৃদরোগ, চোখের অসুখ!  
  
 একজন বেরসিক রোগী গলা কাশলো:  
 ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশী লেবু দিও।  
  
 তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু  
 সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের  
 কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল,  
 সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে  
 আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন  
  
 আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল!


৭. একলা বাতাস 
      আবুল হাসান


নখের ভিতর নষ্ট ময়লা,  
 চোখের ভিতর প্রেম,  
 চুলের কাছে ফেরার বাতাস  
 দেখেই শুধালেম,  
  
 এখন তুমি কোথায় যাবে?  
 কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?  
 কোন আগুনের স্পর্শ নেবে  
 রক্তে কি প্রব্লেম?  
  
 হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম  
 তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে  
 দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে  
 আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম  
  
 এখন তুমি কোথায় যাবে?  
 কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?  
 কোন আগুনের স্পর্শ নেবে  
 রক্তে কি প্রব্লেম?

৮.      আকাঙ্ক্ষা
        আবুল হাসান


তুমি কি আমার আকাশ হবে?  
 মেঘ হয়ে যাকে সাজাব  
 আমার মনের মত করে।  
  
 তুমি কি আমার নদী হবে?  
 যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে  
 তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে।  
  
 তুমি কি আমার জোছনা হবে?  
 যার মায়াজালে বিভোর হয়ে  
 নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে।  
  
 তুমি কি আমার কবর হবে?  
 যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে  
 বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর।

৯.  অপরিচিতি 
     আবুল হাসান


যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!  
  
 স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়  
 অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর  
 ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর  
 সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত  
 আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!

১০.     প্রশ্ন
    আবুল হাসান

চোখ ভরে যে দেখতে চাও  
 রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?  
 বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও  
 জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?  
 এত যে কাছে আসতে চাও  
 কতটুকু সংযম আছে তোমার?  
 এত যে ভালোবাসতে চাও  
 তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?


আমরা চেষ্টা করব আপনাদের  মাঝে ভালো কবিতা গুলো দেয়ার জন্য ,তবে কবিতাগুলো কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না। কবিতা গুলো পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি কবিতাগুলো আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমরা আরো কবিতা দেয়ার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.