কবি শঙ্খ ঘোষ এর কবিতা-সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আছেন। Technical Bangla পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২২: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি শঙ্খ ঘোষ এর লেখা ১৫ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. হাতেমতাই
শঙ্খ ঘোষ
হাতের কাছে ছিল হাতেমতাই
চূড়োয় বসিয়েছি তাকে
দুহাত জোড় করে বলেছি ‘প্রভু
দিয়েছি খত দেখো নাকে।
এবার যদি চাও গলাও দেব
দেখি না বরাতে যা থাকে -
আমার বাঁচামরা তোমারই হাতে
স্মরণে রেখো বান্দাকে!’
ডুমুরপাতা আজও কোমরে ঝোলে
লজ্জা বাকি আছে কিছু
এটাই লজ্জার। এখনও মজ্জার
ভিতরে এত আগুপিছু!
এবার সব খুলে চরণমূলে
ঝাঁপাব ডাঁই করা পাঁকে
এবং মিলে যাব যেমন সহজেই
চৈত্র মেশে বৈশাখে।
২. বৃষ্টি
শঙ্খ ঘোষ
আমার দু:খের দিন তথাগত
আমার সুখের দিন ভাসমান
এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।
আবার সুখের মাঠ জলভরা
আবার দু:খের ধান ভরে যায়
এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে
আমার জন্মের কোনো শেষ নেই।
৩. প্রতিচ্ছবি
শঙ্খ ঘোষ
জংলা পথের মধ্যিখানে সেই আমাদের সত্যিকারের বিভেদ।
তখন থেকে উলটোমুখে চলছি দুজন ঝড়ঝঞ্ঝায়
বাঁয়ের পথে আমি, ডাইনে তুমি।
চলতে চলতে যত্সামান্য মনেও পড়ছে মিলনদিনের ছবি
রক্তমূলক বিচ্ছেদেরও দাগ।
চলতে পারি তবু কেবল নিজের মতো,আর
জ্ঞানগম্যি ছলকে ছলকে দূরের থেকে বাঁকতে পারি আরো অনেক দূরে।
যেতে যেতে কখন দেখি পরস্পরের পাশ -কাটানো পথ গিয়েছে ঘুরে বৃত্ত হয়ে-
আমিই কখন হেঁটে যাচ্ছি তোমার পথে এবং তুমি আমার
অতর্কিতে পালটে গেছে ডাইনে বাঁয়ে পথ হয়েছে অদলবদল বাঁকা
তুমিই এখন আমি, আমিই তুমি
রক্তরেখার এপার থেকে অবাক হয়ে আমার মুখে দেখছি তোমার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
৪. ত্রিতাল
শঙ্খ ঘোষ
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরা ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
বুকে কুঠার সইতে পারা ছাড়া
পাতালমুখ হঠাত্ খুলে গেলে
দুধারে হাত ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, এই
শূন্যতাকে ভরিয়ে দেওয়া ছাড়া।
শ্মশান থেকে শ্মশানে দেয় ছুঁড়ে
তোমারই ঐ টুকরো-করা-শরীর
দু:সময়ে তখন তুমি জানো
হলকা নয়, জীবন বোনে জরি।
তোমার কোনো ধর্ম নেই তখন
প্রহরজোড়া ত্রিতাল শুধু গাঁথা-
মদ খেয়ে তো মাতাল হত সবাই
কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল !
৫. ক্রমাগত
শঙ্খ ঘোষ
এইভাবে হতে থাকে ক্রমাগত
কেউ মারে কেউ মার খায়
ভিতরে সবাই খুব স্বাভাবিক কথা বলে
জ্ঞানদান করে
এইদিকে ঐ দিকে তিন চার পাঁচ দিকে
টেনে নেয় গোপন আখড়ায়
কিছু-বা গলির কোণে অ্যাসফল্ট রাজপথে
সোনার ছেলেরা ছারখার
অল্প দু-চারজন বাকি থাকে যারা
তেল দেয় নিজের চরকায়
মাঝে মাঝে খড়খড়ি তুলে দেখে নেয়
বিপ্লব এসেছে কতদূর
এইভাবে, ক্রমাগত
এইভাবে, এইভাবে ক্রমাগত
৬. আন্দোলন
শঙ্খ ঘোষ
ময়দান ভারি হয়ে নামে কুয়াশায়
দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ
তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ঞচূড়া?
নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই
তোমার ছিন্ন শির, তিমির।
নিহত ছেলের মা
আকাশ ভরে যায় ভস্মে
দেবতাদের অভিমান এইরকম
আর আমাদের বুক থেকে চরাচরব্যাপী কালো হাওয়ার উত্থান
এ ছাড়া আর কোনো শান্তি নেই
কোনো অশান্তিও না।
৭. ছুটি
শঙ্খ ঘোষ
হয়তো এসেছিল। কিন্তু আমি দেখিনি।
এখন কি সে অনেক দূরে চ’লে গেছে?
যাব । যাব । যাব ।
সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় নেওয়া,
সবার দিকে চোখ,
যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম!
কী নাম?
আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকো বাঁধা আছে দুটি,
দুরে সবাই জাল ফেলেছে সমুদ্রে।
৮. ফুলবাজার
শঙ্খ ঘোষ
পদ্ম, তোর মনে পড়ে খালযমুনার এপার ওপার
রহস্যনীল গাছের বিষাদ কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?
স্পষ্ট নৌকো, ছৈ ছিল না, ভাঙা বৈঠা গ্রাম হারানো
বন্য মুঠোয় ডাগর সাহস, ফলপুলন্ত নির্জনতা
আড়ালবাঁকে কিশোরী চাল, ছিটকে সরে মুখের জ্যোতি
আমরা ভেবেছিলাম এরই নাম বুঝি বা জন্মজীবন |
কিন্তু এখন তোর মুখে কী মৃণালবিহীন কাগজ-আভা
সেদিন যখন হেসেছিলি সত্যি মুখে ঢেউ ছিল না!
আমিই আমার নিজের হাতে রঙিন ক’রে দিয়ে ছিলাম
ছলছলানো মুখোশমালা, সে কথা তুই ভালই জানিস—
তবু কি তোর ইচ্ছে করে আলগা খোলা শ্যামবাজারে
সবার হাতে ঘুরতে-ঘরতে বিন্দু বিন্দু জীবনযাপন?
৯. কোনোদিন
শঙ্খ ঘোষ
যেন এই পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন
প্রেম বলে কোনো রাখেনি কোথাও,
যেন কেউ কোনোদিন কিশোর শিশির
বুকে নিয়ে পুব সাগরের নীল পাড়ে
দেখেনি প্রথম নারী যেন কোনোদিন।
নারী যে চোখের কোণ হদৃতটমূলে
ভাসায় দু-ধার, যেন কেউ কোনোদিন
তার মুখ রেখে দিয়ে আসেনি কখনো
গাঢ়তল ভুবনের গহন শিলায়!
যেন শুধু জলস্তম্ভে ছুটে যায় ফুল
ঘট ভেঙে ভেসে যায় সিঁদুরের নাম
আবর্ত বাজায় বুকে বুকে খর তালি -
যেন কেউ কোনোদিন এমন নীরব
পল্লবের মত নত প্রেমিক ছিল না!
১০. ভয়
শঙ্খ ঘোষ
ভয়? কেন ভয়? আমি খুব
শান্ত হয়ে চলে যেতে পারি।
তুমি বলো ভয়। দেখো চেয়ে
অতিকায় আমার না-এর
চৌকাঠে ছড়িয়ে আছে হাত-
যে হাতে সমুদ্র, ঘন বন,
জ্যোতির্বলয়ের ঘেরাটোপে
শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা
রক্তপাত, জীবনযাপন।
প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর
স্মৃতি শুধু, ইতিহাস আছে-
তুমি আর আমি শান্ত তার
প্রবাহদুয়ার রাখি খুলে।
তার মাঝখানে যদি পেশি
একবারও কেঁপে ওঠে, সে কি
ভয়? ভয় নয়। ভয় শুধু
শূন্যতাও যদি মুছে যায়-
শুধু এই প্রতিধ্বনিহীন
অস্তীতির ঘট ভেঙে গিয়ে
কোথাও না থাকে যদি না
তার পায়ে উঠে আসে ভয়
শূন্যতাবিহীন শূন্যতায়।
১১. বোকা
শঙ্খ ঘোষ
আমি খুব ভালো বেঁচে আছি
ছদ্ম সংসারে কানামাছি।
যাকে পাই তাকে ছুঁই,বলি
কেনযাস এ গলি ও গলি?
বরং একবার অকপট
উদাসীন খুব হেসে ওঠ্-
শুনে ওরা বলে এটা কে রে
তলে তলে চর হয়ে ফেরে?
এমন কী সেদিনের খোকা
আঙুল নাচিয়ে বলে ‘বোকা’!
সেই থেকে বোকা হয়ে আছি
শ্যাম বাজারের কাছাকাছি।
১২. সবিনয় নিবেদন
শঙ্খ ঘোষ
আমি তো আমার শপথ রেখেছি
অক্ষরে অক্ষরে
যারা প্রতিবাদী তাদের জীবন
দিয়েছি নরক করে ।
দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল
অন্যে কবে না কথা
বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে
সেটাই স্বাভাবিকতা ।
গুলির জন্য সমস্ত রাত
সমস্ত দিন খোলা
বজ্র কঠিন রাজ্যে এটাই
শান্তি শৃঙ্খলা ।
যে মরে মরুক, অথবা জীবন
কেটে যাক শোক করে—
আমি আজ জয়ী, সবার জীবন
দিয়েছি নরক করে ।
১৩. শবসাধনা
শঙ্খ ঘোষ
বুঝি তোমার চাউনি বুঝি
থাকবে না আর গলিঘুঁজি
থাকবে না আর ছাউনি আমার কোথাও
ও প্রমোটার ও প্রমোটার
তোমার হাতে সব ক্ষমতার
দিচ্ছি চাবি, ওঠাও আমায় ওঠাও ।
তুমিই চিরনমস্য, তাই
তোমার পায়ে রত্ন জোটাই
তোমার পায়েই বিলিয়ে দিই শরীর—
যাঁর যা খুশি বলুন তিনি
করবে তুমি কল্লোলিনী
ভরসা কেবল কলসি এবং দড়ির ।
আমার বলে রইলো শুধু
বুকের ভেতর মস্ত ধু ধু
দিয়েছি সব যেটুকু ছিল দেবার
ঘর ছেড়ে আজ বাইরে আসি
আমরা কজন অন্তেবাসী
শবসাধনার রাত কাটাব এবার ।
১৪. মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
শঙ্খ ঘোষ
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
… তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
একটা দুটো সহজ কথা
….বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে,রংবাহারে।
কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
…. বুঝতে পারা শক্ত খুবই
হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্ম ভূমি।
বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
…. তোমার সাথে ওতপ্রত
নিয়ন আলোয় পণ্য হলো
যা কিছু আজ ব্যাক্তিগত।
মুখের কথা একলা হয়ে
…. রইলো পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।
১৫. মাতাল
শঙ্খ ঘোষ
আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না!
এখনও যে ও যুবক আছে প্রভু!
এবার তবে প্রৌঢ় করে দাও-
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ওকে বইতে পারবে না।
কবিতা গুলো কেমন লাগতেছে তা আমাদের জানাবেন। এই কবিতা গুলো কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর অনেক কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-২২: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন। আজকে আমি নিয়ে এসেছি কবি শঙ্খ ঘোষ এর লেখা ১৫ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. হাতেমতাই
শঙ্খ ঘোষ
হাতের কাছে ছিল হাতেমতাই
চূড়োয় বসিয়েছি তাকে
দুহাত জোড় করে বলেছি ‘প্রভু
দিয়েছি খত দেখো নাকে।
এবার যদি চাও গলাও দেব
দেখি না বরাতে যা থাকে -
আমার বাঁচামরা তোমারই হাতে
স্মরণে রেখো বান্দাকে!’
ডুমুরপাতা আজও কোমরে ঝোলে
লজ্জা বাকি আছে কিছু
এটাই লজ্জার। এখনও মজ্জার
ভিতরে এত আগুপিছু!
এবার সব খুলে চরণমূলে
ঝাঁপাব ডাঁই করা পাঁকে
এবং মিলে যাব যেমন সহজেই
চৈত্র মেশে বৈশাখে।
২. বৃষ্টি
শঙ্খ ঘোষ
আমার দু:খের দিন তথাগত
আমার সুখের দিন ভাসমান
এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।
আবার সুখের মাঠ জলভরা
আবার দু:খের ধান ভরে যায়
এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে
আমার জন্মের কোনো শেষ নেই।
৩. প্রতিচ্ছবি
শঙ্খ ঘোষ
জংলা পথের মধ্যিখানে সেই আমাদের সত্যিকারের বিভেদ।
তখন থেকে উলটোমুখে চলছি দুজন ঝড়ঝঞ্ঝায়
বাঁয়ের পথে আমি, ডাইনে তুমি।
চলতে চলতে যত্সামান্য মনেও পড়ছে মিলনদিনের ছবি
রক্তমূলক বিচ্ছেদেরও দাগ।
চলতে পারি তবু কেবল নিজের মতো,আর
জ্ঞানগম্যি ছলকে ছলকে দূরের থেকে বাঁকতে পারি আরো অনেক দূরে।
যেতে যেতে কখন দেখি পরস্পরের পাশ -কাটানো পথ গিয়েছে ঘুরে বৃত্ত হয়ে-
আমিই কখন হেঁটে যাচ্ছি তোমার পথে এবং তুমি আমার
অতর্কিতে পালটে গেছে ডাইনে বাঁয়ে পথ হয়েছে অদলবদল বাঁকা
তুমিই এখন আমি, আমিই তুমি
রক্তরেখার এপার থেকে অবাক হয়ে আমার মুখে দেখছি তোমার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
৪. ত্রিতাল
শঙ্খ ঘোষ
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরা ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
বুকে কুঠার সইতে পারা ছাড়া
পাতালমুখ হঠাত্ খুলে গেলে
দুধারে হাত ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, এই
শূন্যতাকে ভরিয়ে দেওয়া ছাড়া।
শ্মশান থেকে শ্মশানে দেয় ছুঁড়ে
তোমারই ঐ টুকরো-করা-শরীর
দু:সময়ে তখন তুমি জানো
হলকা নয়, জীবন বোনে জরি।
তোমার কোনো ধর্ম নেই তখন
প্রহরজোড়া ত্রিতাল শুধু গাঁথা-
মদ খেয়ে তো মাতাল হত সবাই
কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল !
৫. ক্রমাগত
শঙ্খ ঘোষ
এইভাবে হতে থাকে ক্রমাগত
কেউ মারে কেউ মার খায়
ভিতরে সবাই খুব স্বাভাবিক কথা বলে
জ্ঞানদান করে
এইদিকে ঐ দিকে তিন চার পাঁচ দিকে
টেনে নেয় গোপন আখড়ায়
কিছু-বা গলির কোণে অ্যাসফল্ট রাজপথে
সোনার ছেলেরা ছারখার
অল্প দু-চারজন বাকি থাকে যারা
তেল দেয় নিজের চরকায়
মাঝে মাঝে খড়খড়ি তুলে দেখে নেয়
বিপ্লব এসেছে কতদূর
এইভাবে, ক্রমাগত
এইভাবে, এইভাবে ক্রমাগত
৬. আন্দোলন
শঙ্খ ঘোষ
ময়দান ভারি হয়ে নামে কুয়াশায়
দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ
তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ঞচূড়া?
নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই
তোমার ছিন্ন শির, তিমির।
নিহত ছেলের মা
আকাশ ভরে যায় ভস্মে
দেবতাদের অভিমান এইরকম
আর আমাদের বুক থেকে চরাচরব্যাপী কালো হাওয়ার উত্থান
এ ছাড়া আর কোনো শান্তি নেই
কোনো অশান্তিও না।
৭. ছুটি
শঙ্খ ঘোষ
হয়তো এসেছিল। কিন্তু আমি দেখিনি।
এখন কি সে অনেক দূরে চ’লে গেছে?
যাব । যাব । যাব ।
সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় নেওয়া,
সবার দিকে চোখ,
যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম!
কী নাম?
আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকো বাঁধা আছে দুটি,
দুরে সবাই জাল ফেলেছে সমুদ্রে।
৮. ফুলবাজার
শঙ্খ ঘোষ
পদ্ম, তোর মনে পড়ে খালযমুনার এপার ওপার
রহস্যনীল গাছের বিষাদ কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?
স্পষ্ট নৌকো, ছৈ ছিল না, ভাঙা বৈঠা গ্রাম হারানো
বন্য মুঠোয় ডাগর সাহস, ফলপুলন্ত নির্জনতা
আড়ালবাঁকে কিশোরী চাল, ছিটকে সরে মুখের জ্যোতি
আমরা ভেবেছিলাম এরই নাম বুঝি বা জন্মজীবন |
কিন্তু এখন তোর মুখে কী মৃণালবিহীন কাগজ-আভা
সেদিন যখন হেসেছিলি সত্যি মুখে ঢেউ ছিল না!
আমিই আমার নিজের হাতে রঙিন ক’রে দিয়ে ছিলাম
ছলছলানো মুখোশমালা, সে কথা তুই ভালই জানিস—
তবু কি তোর ইচ্ছে করে আলগা খোলা শ্যামবাজারে
সবার হাতে ঘুরতে-ঘরতে বিন্দু বিন্দু জীবনযাপন?
৯. কোনোদিন
শঙ্খ ঘোষ
যেন এই পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন
প্রেম বলে কোনো রাখেনি কোথাও,
যেন কেউ কোনোদিন কিশোর শিশির
বুকে নিয়ে পুব সাগরের নীল পাড়ে
দেখেনি প্রথম নারী যেন কোনোদিন।
নারী যে চোখের কোণ হদৃতটমূলে
ভাসায় দু-ধার, যেন কেউ কোনোদিন
তার মুখ রেখে দিয়ে আসেনি কখনো
গাঢ়তল ভুবনের গহন শিলায়!
যেন শুধু জলস্তম্ভে ছুটে যায় ফুল
ঘট ভেঙে ভেসে যায় সিঁদুরের নাম
আবর্ত বাজায় বুকে বুকে খর তালি -
যেন কেউ কোনোদিন এমন নীরব
পল্লবের মত নত প্রেমিক ছিল না!
১০. ভয়
শঙ্খ ঘোষ
ভয়? কেন ভয়? আমি খুব
শান্ত হয়ে চলে যেতে পারি।
তুমি বলো ভয়। দেখো চেয়ে
অতিকায় আমার না-এর
চৌকাঠে ছড়িয়ে আছে হাত-
যে হাতে সমুদ্র, ঘন বন,
জ্যোতির্বলয়ের ঘেরাটোপে
শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা
রক্তপাত, জীবনযাপন।
প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর
স্মৃতি শুধু, ইতিহাস আছে-
তুমি আর আমি শান্ত তার
প্রবাহদুয়ার রাখি খুলে।
তার মাঝখানে যদি পেশি
একবারও কেঁপে ওঠে, সে কি
ভয়? ভয় নয়। ভয় শুধু
শূন্যতাও যদি মুছে যায়-
শুধু এই প্রতিধ্বনিহীন
অস্তীতির ঘট ভেঙে গিয়ে
কোথাও না থাকে যদি না
তার পায়ে উঠে আসে ভয়
শূন্যতাবিহীন শূন্যতায়।
১১. বোকা
শঙ্খ ঘোষ
আমি খুব ভালো বেঁচে আছি
ছদ্ম সংসারে কানামাছি।
যাকে পাই তাকে ছুঁই,বলি
কেনযাস এ গলি ও গলি?
বরং একবার অকপট
উদাসীন খুব হেসে ওঠ্-
শুনে ওরা বলে এটা কে রে
তলে তলে চর হয়ে ফেরে?
এমন কী সেদিনের খোকা
আঙুল নাচিয়ে বলে ‘বোকা’!
সেই থেকে বোকা হয়ে আছি
শ্যাম বাজারের কাছাকাছি।
১২. সবিনয় নিবেদন
শঙ্খ ঘোষ
আমি তো আমার শপথ রেখেছি
অক্ষরে অক্ষরে
যারা প্রতিবাদী তাদের জীবন
দিয়েছি নরক করে ।
দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল
অন্যে কবে না কথা
বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে
সেটাই স্বাভাবিকতা ।
গুলির জন্য সমস্ত রাত
সমস্ত দিন খোলা
বজ্র কঠিন রাজ্যে এটাই
শান্তি শৃঙ্খলা ।
যে মরে মরুক, অথবা জীবন
কেটে যাক শোক করে—
আমি আজ জয়ী, সবার জীবন
দিয়েছি নরক করে ।
১৩. শবসাধনা
শঙ্খ ঘোষ
বুঝি তোমার চাউনি বুঝি
থাকবে না আর গলিঘুঁজি
থাকবে না আর ছাউনি আমার কোথাও
ও প্রমোটার ও প্রমোটার
তোমার হাতে সব ক্ষমতার
দিচ্ছি চাবি, ওঠাও আমায় ওঠাও ।
তুমিই চিরনমস্য, তাই
তোমার পায়ে রত্ন জোটাই
তোমার পায়েই বিলিয়ে দিই শরীর—
যাঁর যা খুশি বলুন তিনি
করবে তুমি কল্লোলিনী
ভরসা কেবল কলসি এবং দড়ির ।
আমার বলে রইলো শুধু
বুকের ভেতর মস্ত ধু ধু
দিয়েছি সব যেটুকু ছিল দেবার
ঘর ছেড়ে আজ বাইরে আসি
আমরা কজন অন্তেবাসী
শবসাধনার রাত কাটাব এবার ।
১৪. মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
শঙ্খ ঘোষ
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
… তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
একটা দুটো সহজ কথা
….বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে,রংবাহারে।
কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
…. বুঝতে পারা শক্ত খুবই
হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্ম ভূমি।
বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
…. তোমার সাথে ওতপ্রত
নিয়ন আলোয় পণ্য হলো
যা কিছু আজ ব্যাক্তিগত।
মুখের কথা একলা হয়ে
…. রইলো পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।
১৫. মাতাল
শঙ্খ ঘোষ
আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না!
এখনও যে ও যুবক আছে প্রভু!
এবার তবে প্রৌঢ় করে দাও-
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ওকে বইতে পারবে না।
কবিতা গুলো কেমন লাগতেছে তা আমাদের জানাবেন। এই কবিতা গুলো কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর অনেক কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
No comments