কবি সমর সেন এর কবিতা-সমূহ - TECHNICAL BANGLA

কবি সমর সেন এর কবিতা-সমূহ

আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,??আশা করি সবাই ভালো আসেন। Technical Bangla পক্ষ থেকে আমি নয়ন আছি আপনাদের সাথে,,,,,বরারবে মতো আবারও আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। 

হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-১৯: তে আপনাদের আবার স্বাগতম।সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কবিতা গুলো আপনার ভালো লাগলে সবার মাঝে শেয়ার করুন।  আজকে আমি  নিয়ে এসেছি কবি  সমর সেন  এর লেখা ১৫ টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-

১. স্বর্গ হতে বিদায়
      সমর সেন

সমুদ্র শেষ হ'লো,  
আজ দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে  
উড়ন্ত পাখির মতো।  
সমুদ্র শেষ হ'লো  
গভীর বনে আর হরিণ নেই,  
সবুজ পাখি গিয়েছে ম'রে,  
আর পাহাড়ের ধূসর অন্ধকারে  
দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে  
উড়ন্ত পাখির মতো।  
সমুদ্র শেষ হ'লো,  
চাঁদের আলোয়  
সময়ের শূন্য মরুভূমি জ্বলে।  

২. আত্মসমালোচনা
       সমর সেন

একদা আমরা ছিলাম বিমর্ষ বাঁদর;  
আজ আস্ফালনে মত্ত যেন বীর হনুমান।  
সেতুবন্ধের অনেক বাকি,  
ওপারে রাক্ষসের স্পর্ধা দিনেদিনে বাড়ে,  
প্রতিদিন দেখি উষ্টগ্র্রীব প্রতিনিধি তার  
এদেশকে নির্বিকারে বলাত্কার করে;  
কিন্তু ভাই, নিশ্চিত জানি  
শেষপর্যন্ত ইতিহাস নির্ঘাত্ আমাদের দিকে;  
সেই ঐশী ইতিহাসশক্তির মায়ায়  
লেজের জটিল জাল দেখি রাবনের গলায়।  

৩. একটি কবিতা
       সমর সেন

সন্ধ্যার ট্রেন আকাশে ধোঁয়ার স্তম্ভ আঁকে,  
ভারি লাল চাঁদ আসর জমায়;  
বহু আশাভঙ্গে ফেঁপেছে মন,  
বয়স তো হল, আর কেন ভীমরতি,  
প্রভুহীন কুকুরের মতো আর কতোকাল।  
আপন চর্চায় শুধু শূন্য ফানুস ফাঁসে,  
বিধি হলে বাম  
আপনি বাঁচালে বাপের নাম  
সে দিন নেই।  
চাপা সূর্যের ভ্রূকুটি আকাশ ছিন্ন ক’রে  
সবুজ গাছে কালো কাকে সকাল আনে;  
সারাদিন আপন মনে মনের উকুন বাছা,  
লোকালয়ের খেয়াঘাটে অর্থহীন এ আত্মম্ভরী গান।  

৪. এবার ফিরাও মোরে
            সমর সেন

পড়ন্ত রোদে নগর লাল হল।  
বহুদূর দেশে  
পাহাড়ের ছায়া প্রান্তরে পড়ে;  
সন্ধ্যার অন্ধকারে অন্ধ নদীর  
মদির ক্লান্ত টান।  
  
মেমননের স্তব্ধ মূর্তি  
রাত্রি হয়ে এল শেষ  
এবার ফিরাও মোরে।  

৫.  একটি মেয়ে
       সমর সেন

আমাদের স্তিমিত চোখের সামনে  
আজ তোমার আবির্ভাব হ'লো  
স্বপ্নের মত চোখ, সুন্দর, শুভ্র বুক,  
রক্তিম ঠোঁট যেন শরীরের প্রথম প্রেম  
আর সমস্ত দেহে কামনার নির্ভিক আভাস  
আমাদের কলুসিত দেহে  
আমাদের দুর্বল, ভীরু অন্তরে।  
সে-উজ্জ্বল বাসনা যেন তীক্ষ্ণ প্রহার।  

৬. একটি বেকার প্রেমিক
            সমর সেন

চোরাবাজারে দিনের পর দিন ঘুরি।  
  
সকালে কলতলায়  
ক্লান্ত গণিকারা কোলাহল করে,  
খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্ দ শুনি;  
মাঝে মাঝে ক্লান্ত ভাবে কী যেন ভাবি---  
হে প্রেমের দেবতা, ঘুম যে আসে না, সিগারেট টানি;  
আর শহরের রাস্তায় কখনো প্রাণপণে দেখি  
ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক।  
আর মদির মধ্য রাত্রে মাঝে মাঝে বলি  
মৃত্যুহীন প্রেম থেকে মুক্তি দাও,  
পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী আনো  
হানো ইস্পাতের মত উদ্যত দিন।  
কলতলায় ক্লান্ত কোলাহলে  
সকালে ঘুম ভাঙে  
আর সমস্তক্ষণ রক্তে জ্বলে  
বণিক-সভ্যতার শূণ্য মরুভূমি।

৭. তুমি যেখানেই যাও
           সমর সেন

তুমি যেখানেই যাও,  
কোনো চকিত মুহুর্তের নিঃশব্ দতায়  
হঠাৎ শুনতে পাবে  
মৃত্যুর গম্ভীর, অবিরাম পদক্ষেপ।  
  
আর, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?  
তুমি যেখানেই যাও  
আকাশের মহাশূণ্য হ'তে জুপিটারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি  
লেডার শুভ্র বুকে পড়বে।  

৮.       নিরালা
         সমর সেন


বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা,  
মাঝে মাঝে মনে হয়,  
দুর্মুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখে  
তোমাকে নিয়ে কোথাও স'রে পড়ি |  
নদীর উপরে যেখানে নীল আকাশ নামে  
গভীর স্নেহে,  
শেয়াল-সংকুল কোনো নির্জন গ্রামে  
কুঁড়েঘর বাঁধি;  
গোরুর দুধ, পোষা মুরগির ডিম, খেতের ধান;  
রাত্রে কান পেতে শোনা বাঁশবনে মশার গান;  
সেখানে দুপুরে শ্যাওলায় সবুজ পুকুরে  
গোরুর মতো করুণ চোখ  
বাংলার বধূ নামে;  
নিরালা কাল আপন মনে  
পুরোনো বিষণ্ণতা হাওয়ায় বোনে।  

৯.      উর্বশী
         সমর সেন


তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে  
দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো!  
কিংবা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে,  
হে ক্লান্ত উর্বশী,  
চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেমন বিষণ্ণমুখে  
উর্বর মেয়েরা আসে  
কত অতৃপ্ত রাত্রির ক্ষুধার ক্লান্তি,  
কত দীর্ঘশ্বাস,  
কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতো,  
আর কতো দিন!  

১০. নিঃশব্দতার ছন্দ
           সমর সেন

স্তব্ধরাত্রে কেন তুমি বাইরে যাও?  
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,  
বিশাল অন্ধকারে শুধু একটি তারা কাঁপে,  
হাওয়ায় কাঁপে শুধু একটি তারা।  
  
কেন তুমি বাইরে যাও স্তব্ধরাত্রে  
আমাকে একলা ফেলে?  
কেন তুমি চেয়ে থাক ভাষাহীন, নিঃশব্দ পাথরের মতো?  
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,  
বাতাসে গাছের পাতা নড়ে,  
আর দেবদারুগাছের পিছনে তারাটি কাঁপে আর কাঁপে;  
আমাকে কেন ছেড়ে যাও  
মিলনের মুহূর্ত হতে বিরহের স্তব্ধতায়?  
  
মাঝে মাঝে চকিতে যেন অনুভব করি  
তোমার নিঃশব্দতার ছন্দ :  
সহসা বুঝতে পারি—  
দিনের পর কেন রাত আসে  
আর তারারা কাঁপে আপন মনে,  
কেন অন্ধকারে  
মাটির পৃথিবীতে আসে সবুজ প্রাণ;  
চপল, তীব্র, নিঃশব্দ প্রাণ—  
বুঝতে পারি কেন  
স্তব্ধ অর্ধরাত্রে আমাকে কেন তুমি ছেড়ে যাও  
মিলনের মুহূর্ত থেকে বিরহের স্তব্ধতায়।  

১১.    বিস্মৃতি
          সমর সেন

ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো  
কখনো তোমাকে মনে পড়ে |  
হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস।  
আর মেঘের কঠিন রেখায়  
আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।  
হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ'লো,  
তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ ধতা এলো,  
বৃষ্টির আগে শব্ দহীন গাছে যে-কোমল, সবুজ স্তব্ ধতা আসে।  

১২.     বিরহ
          সমর সেন


রজনীগন্ধার আড়ালে কী যেন কাঁপে,  
কী যেন কাঁপে  
পাহাড়ের স্তব্ ধ গভীরতায়।  
  
তুমি এখনো এলে না।  
সন্ধ্যা নেমে এলো: পশ্চিমের করুণ আকাশ,  
গন্ধে ভরা হাওয়া,  
আর পাতার মর্মর-ধ্বনি।  

১৩. মুক্তি
    সমর সেন

হিংস্র পশুর মতো অন্ধকার এলো--  
তখন পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশ রক্তকরবীর মতো লাল  
সে-অন্ধকার মাটিতে আনলো কেতকীর গন্ধ,  
রাতের অলস স্বপ্ন  
এঁকে দিল কারো চোখে,  
সে-অন্ধকার জ্বেলে দিলো কামনার কম্পিত শিখা  
কুমারীর কমনীয় দেহে।  
  
কেতকীর গন্ধে দুরন্ত,  
এই অন্ধকার আমাকে কী ক'রে ছোঁবে?  
পাহাড়ের ধূসর স্তব্ধতায় শান্ত আমি,  
আমার অন্ধকারে আমি  
নির্জন দ্বীপের মতো সুদূর, নিঃসঙ্গ।  

১৪. মেঘদূত
      সমর সেন


পাশের ঘরে  
একটি মেয়ে ছেলে-ভুলানো ছড়া গাইছে,  
সে ক্লান্ত সুর  
ঝ'রে-যাওয়া পাতার মতো হাওয়ায় ভাসছে,  
আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে  
অন্ধকার আকাশের বনে।  
  
বৃষ্টির আগে ঝড়, বৃষ্টির পরে বন্যা । বর্ষাকালে,  
অনেক দেশে যখন অজস্র জলে ঘরবাড়ি ভাঙবে,  
ভাসবে মূক পশু ও মুখর মানুষ,  
শহরের রাস্তায় যখন  
সদলবলে গাইবে দুর্ভিক্ষের স্বেচ্ছাসেবক,  
তোমার মনে তখন মিলনের বিলাস,  
ফিরে যাবে তুমি বিবাহিত প্রেমিকের কাছে।  
হে ম্লান মেয়ে, প্রেমে কী আনন্দ পাও,  
কী আনন্দ পাও সন্তানধারণে?  

১৫.  বসন্ত
    সমর সেন

বসন্তের বজ্রধ্বনি অদৃশ্য পাহাড়ে |  
আজ বর্ষশেষে  
পিঙ্গল মরুভূমি প্রান্ত হতে  
ক্লান্ত চোখে ধানের সবুজ অগ্নিরেখা দেখি  
সুদূর প্রান্তরে।  


আমাদের এই কবিতা গুলো  কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য  ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর অনেক কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.