কুসুম কুমারী দাশ এর কবিতা-সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন,,,?? Technical Bangla পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব- ১০: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি কুসুম কুমারী দাশ এর লেখা ১০ টি কবিতা গুলো সবাই মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. মনুষ্যত্ব
কুসুম কুমারী দাশ
একদিন লিখেছিনু আদর্শ যে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
আজ লিখিতেছি বড় দুঃখ লয়ে প্রাণে
তোমরা মানুষ হবে কাহার কল্যাণে?
মানুষ গড়িয়া ওঠে কোন্ উপাদানে;
বাঙালি বোঝেনি তাহা এখনো জীবনে--
পুঁথি হাতে পাঠ শেখা--দু-চারটে পাশ
আজিকার দিনে তাহে মিলে না আশ্বাস,
চাই শৌর্য, চাই বীর্য, তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে হবে এই পণ--
বিপদ আসিলে কাছে হবে আগুয়ান
দুই খানি বাহু বিশ্বে সবারি সমান--
দাতার যে দান তাহা সকলেই পায়
কেউ ছোট কেউ বড় কেন হয়ে যায়!
কেন তবে পদতলে পড়ি বারবার?
মনুষ্যত্ব জাগাইলে পাইব উদ্ধার--।
যত অপমান, যত লাঞ্ছনা পীড়ন
একতার বলে সব হইবে দমন!
তেজীয়ান, বলীয়ান সেই ছেলে চাই
সোনার বাংলা আজি হারায়েছে তাই।
আবার গড়িতে হবে বীর শিশুদল,
বাংলার রূপ যাহে হবে সমুজ্জ্বল।
২. আদর্শ ছেলে
কুসুম কুমারী দাশ
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে-এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ?
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয়?
সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায়।
সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ ---
মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।
কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার
সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।
৩. বসন্তে
কুসুম কুমারী দাশ
উত্সব গান, মধুময় তান
আকাশ ধরণী-তলে
কুঞ্জে কুঞ্জে বিহগ কণ্ঠে
লতায় পাতায় ফুলে।
হৃদয়ে সবার দিয়েছে রে দোল
নাচিয়া উঠিছে প্রাণ,
(এ যে) নূতন দেশের মোহন ঝঙ্কার
নূতন দেশের গান।
এ বসন্ত কার, দিতেছে বাহার
চেতনার ঢেউ খুলি
কেবা আপনার, কেবা পর আর
ব্যবধান গেছে খুলি
আজ সে এসেছে দেবদূত হয়ে
জাগাতে সহস্র প্রাণ,
কে আসিবি আয়, ওই শোনা যায়
আনন্দময়ের গান।
কে বাঁচিবি আয়, বাতাসে বাতাসে
পরশে চেতনা জাগে;
কে বাঁচিবি আয়, হৃদয়ে হৃদয়ে,
আজি নব অনুরাগে।
৪. মায়ের প্রতি
কুসুম কুমারী দাশ
তোমার বন্দিনী মূর্তি ফুটিল যখন,
দীপ্ত দিবালোকে,
সহস্র ভায়ের প্রাণ উঠিল শিহরি,
ঘৃণা, লজ্জা, শোকে।
পবিত্র বন্দনমন্ত্রে কম্পিত বাংলা
দূর আর্য ভূমি!
মুক্তকণ্ঠে যুক্তকরে ডাকিছে তোমায়,
হে লজ্জাবারিণী।
সাধনার ধন তুমি ভারতবাসীর,---
সহস্র পীড়নে,
উপবাসে, অনশনে ভোলে নাই তোমা।
দুর্বল সন্তানে
দিব্য মন্ত্রে দিব্য স্নেহে দাও স্থান আজি
মন্দিরে তোমার ;
যায় যাক্ থাক্ প্রাণ, সে মন্ত্র শুনিয়া
জাগিব আবার।
হিমাচল হবে দূর কুমারিকা পার
কাননে, প্রান্তরে,
নগরে-নগরে ক্ষুদ্র প্রল্লীতে-পল্লীতে,
প্রাসাদে কুটিরে,
কোটি কোটি মৃত প্রাণ, হোমাগ্নির প্রায়
উঠুক জ্বলিয়া,
মা তোর তাপসী-মূর্তি পূজিবে সন্তান
হিয়া রক্ত দিয়া।
৫. সাধন পথে
কুসুম কুমারী দাশ
এক বিন্দু অমৃতের লাগি
কি আকুল পিপাসিত হিয়া,
এক বিন্দু শান্তির লাগিয়া
কর্মক্লান্ত দুটি বাহু দিয়া---
কাজ শুধু করে যায়
অন্তরেতে দুরন্ত সাধনা,
তুমি তার দীর্ঘ পথে
হবে সাথী একান্ত ভাবনা।
সে জানে এ আরাধনা
কবে তার হইবে সফল;
তব বাণী যেই দিন তারি
ভাষা হয়ে ঘুচাবে সকল
অন্তরের অহঙ্কার,
স্তুতি, নিন্দা, ভয়
সেদিন লভিবে শান্তি,
সংগ্রামে বিজয়।
তোমার স্বরূপে তার রূপ হবে লীন!
সেই তার সাধনার পরম সুদিন।
৬. দাদার চিঠি
কুসুম কুমারী দাশ
আয়রে মনা, ভুতো, বুলী আয়রে তাড়াতাড়ি,
দাদার চিঠি এসেছে আজ, শুনাই তোদের পড়ি।
কলকাতাতে এসেছি ভাই কালকে সকাল বেলা,
হেথায় কত গাড়ি, ঘোড়া, কত লোকের মেলা।
পথের পাশে সারি সারি দু'কাতারে বাড়ি
দিন রাত্তির হুস্ হুস্ করে ছুটেছে রেল গাড়ি।
আমি কি ভাই গেছি বুলে তোদের মলিন মুখ,
মনে পড়লে এখনও যে কেঁপে ওঠে বুক।
সেই যে মায়ের জলে ভরা স্নেহের নয়ন দু'টি
সেই যে আমার হাতটি ছেড়ে দিতে চায় নি পুঁটি---
ভূতি মনার আবদারে ভাব, দাদা, কোথায় যাবে?
যদি তুমি যেতে চাও তো সঙ্গে মোদের নেবে।
সেই যে বুলী ঠোঁট কাপায়ে চুলের গোছা ছেড়ে
যেতে নাহি দিব ব'লে দাঁড়িয়েছিল দোরে---
সেই যে নলিন ষ্টেশন ঘরে চোখে কাপড় দিয়ে
কাঁদছিলি তুই হাতখানি মোর তোর হাতেতে নিয়ে।
সে সব কথা মনে প'ড়ে চোখে আসছে জল
দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ভরা বুকের বল।
এসব কথা মায়ের কাছে বলো নাক' ভাই,
আজকে আমি এখান হ'তে বিদায় হ'তে চাই।
আর এক কথা, নিয়মমত লিখো আমায় চিঠি
কেমন আছে ভূতি, মনা, বুলী, ছোট পুঁটি?
মা বাবাকে প্রণাম দিয়ে বলবে আমার কথা,
সিটি কলেজ খুললে আমি ভর্তি হব তথা।
দু'চার দিন আর আছে বাকি, ভাল আছি আমি আমার হ'য়ে ভাইবোনদের চুমু দিও তুমি।
বিদেশ এলে বুঝতে পারবে কেমন করে প্রাণ,
বুঝেছি ভাই কাকে ব'লে এক রক্তের টান।
এখন আমার চোখের কাছে যেন জগত্খানা
ভাসছে নিয়ে ভূতো, পুঁটি, বুলী, ননী,মনা।''
৭. খোকার বিড়াল ছানা
কুসুম কুমারী দাশ
সোনার ছেলে খোকামণি, তিনটি বিড়াল তার,
একডণ্ড নাহি তাদের করবে চোখের আড়।
খেতে শুতে সকল সময় থাকবে তারা কাছে,
না হ'লে কি খোকামণির খাওয়া দাওয়া আছে?
এত আদর পেয়ে বিড়াছানাগুলি,
দাদা, দিদি, মাসি, পিসি সকল গেছে ভুলি।
সোনামুখী, সোহাগিনী, চাঁদের কণা ব'লে
ডাকে খোকা, ছানাগুলি যায় আদরে গলে।
সোনামুখী সবার বড় খোকার কোলে বসে,
সোহাগিনী ছোটো যেটি বসে মাথার পাশে।
মাঝখানেতে মানে মানে বসে' চাঁদের কণা,
একে একে সবাই কোলে করবে আনাগোনা।
৮. বান্দনা
কুসুম কুমারী দাশ
বিশ্ব আঁধার ভেদিয়া করে বন্দনা
নবীন রক্ত তপন মহান আলোকে।
গরজি গভীর স্বননে ধায় পারাবার
চুমিতে চরণতল অতুল পুলকে!
বনে উপবনে ফোটে কত ফুল
শিশিরসিক্ত নব-লাবণ্যে ভরিয়া
পরিমল শোভা সকলি বিকশি উঠে
তব মধুর পরশ লাগিয়া
দিগ্ দিগন্তে চুমিয়া বহে সমীরণ
কাহারে খুঁজিছে সে দিশেহারা?
শান্ত উদার গগনে, অযুত অযুত তারকা
কৌতুকভরে নেহারে কাহারে তারা?
কুলকুলু নাদে তটিনী ছুটিছে
তার বক্ষে বিপুল বাসনা
প্রেম-পাগল হিয়াখানি আজি
ওই চরণে করিবে লগনা।
গীতগন্ধ ছন্দোময় বিশ্ব
কত বন্দন পাঠায় তোমারি কাছে।
ওগো গম্ভীর, ওগো সুন্দর, ভূবনবাঞ্ছিত
কি দিবে দীন, শুধু করুণা যাচে।
৯. উদ্বধোন
কুসুম কুমারী দাশ
বঙ্গের ছেলে-মেয়ে জাগো, জাগো, জাগো,
পরের করুণা কেন শুধু মাগো---
আপনারে বলে নির্ভর রাখো
হবে জয় নিশ্চয়---
চারিদিকে হেরো কী দুঃখ-দুর্দিন,
কত ভাই বোন অন্ন-বস্ত্র-হীন,
সোনার বাংলা হয়েছে মলিন
কী দীরুণ বেদনায়---
তোমরা জাগিয়া দুঃখ ঘুচালে,
সকলের ব্যথা সকলে বুঝিলে
ত্যাগ, একতায় জাগিয়া উঠিলে,
তবে বঙ্গ রক্ষা পায়।
পৃথিবী জুড়িয়ে যত অভিযান
সকলেই চায় দেশের কল্যাণ (সম্মান)
জননী জন্মভূমির উত্থান,
মানুষ যে সে-ই চায়।
১০. অরূপের রূপ
কুসুম কুমারী দাশ
রূপসিন্ধু মাঝে হেরি অরূপ তোমায়,
হৃদয় ভরিয়া গেল সুধার ধারায়!
কোন্ মৃত্তিকায় খুঁজি কোন তীর্থ-নীরে,
স্ব-প্রকাশ বিরাজিত বিশ্বের মন্দিরে---
উদার আকাশ তল, সিন্ধুর সুনীল জল,
ওই গিরি নির্ঝরিনী অশ্রান্ত উচ্ছল।
প্রান্তর দিগন্ত-লীন শ্যামা মধুরিমা,
প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে কার এ সুষমা?
হায়রে সম্বলহীন, কুণ্ঠা ছিল মনে---
তাঁর দেখা পাবি তুই কবে কোনখানে?
শত হস্ত বাড়ায়ে যে ধরিবারে চায়,
পাই নাই বলে তারে দিবি কি বিদায়?
অন্তরে বাহিরে হের অপূর্ব্ব আলোকে
তাঁরি জ্যোতির্ময় রূপ, দ্য়ুলোকে ভূলোকে!
আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন,,,,,,,প্লিজ।
পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব- ১০: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি কুসুম কুমারী দাশ এর লেখা ১০ টি কবিতা গুলো সবাই মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. মনুষ্যত্ব
কুসুম কুমারী দাশ
একদিন লিখেছিনু আদর্শ যে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
আজ লিখিতেছি বড় দুঃখ লয়ে প্রাণে
তোমরা মানুষ হবে কাহার কল্যাণে?
মানুষ গড়িয়া ওঠে কোন্ উপাদানে;
বাঙালি বোঝেনি তাহা এখনো জীবনে--
পুঁথি হাতে পাঠ শেখা--দু-চারটে পাশ
আজিকার দিনে তাহে মিলে না আশ্বাস,
চাই শৌর্য, চাই বীর্য, তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে হবে এই পণ--
বিপদ আসিলে কাছে হবে আগুয়ান
দুই খানি বাহু বিশ্বে সবারি সমান--
দাতার যে দান তাহা সকলেই পায়
কেউ ছোট কেউ বড় কেন হয়ে যায়!
কেন তবে পদতলে পড়ি বারবার?
মনুষ্যত্ব জাগাইলে পাইব উদ্ধার--।
যত অপমান, যত লাঞ্ছনা পীড়ন
একতার বলে সব হইবে দমন!
তেজীয়ান, বলীয়ান সেই ছেলে চাই
সোনার বাংলা আজি হারায়েছে তাই।
আবার গড়িতে হবে বীর শিশুদল,
বাংলার রূপ যাহে হবে সমুজ্জ্বল।
২. আদর্শ ছেলে
কুসুম কুমারী দাশ
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে-এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ?
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয়?
সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায়।
সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ ---
মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।
কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার
সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।
৩. বসন্তে
কুসুম কুমারী দাশ
উত্সব গান, মধুময় তান
আকাশ ধরণী-তলে
কুঞ্জে কুঞ্জে বিহগ কণ্ঠে
লতায় পাতায় ফুলে।
হৃদয়ে সবার দিয়েছে রে দোল
নাচিয়া উঠিছে প্রাণ,
(এ যে) নূতন দেশের মোহন ঝঙ্কার
নূতন দেশের গান।
এ বসন্ত কার, দিতেছে বাহার
চেতনার ঢেউ খুলি
কেবা আপনার, কেবা পর আর
ব্যবধান গেছে খুলি
আজ সে এসেছে দেবদূত হয়ে
জাগাতে সহস্র প্রাণ,
কে আসিবি আয়, ওই শোনা যায়
আনন্দময়ের গান।
কে বাঁচিবি আয়, বাতাসে বাতাসে
পরশে চেতনা জাগে;
কে বাঁচিবি আয়, হৃদয়ে হৃদয়ে,
আজি নব অনুরাগে।
৪. মায়ের প্রতি
কুসুম কুমারী দাশ
তোমার বন্দিনী মূর্তি ফুটিল যখন,
দীপ্ত দিবালোকে,
সহস্র ভায়ের প্রাণ উঠিল শিহরি,
ঘৃণা, লজ্জা, শোকে।
পবিত্র বন্দনমন্ত্রে কম্পিত বাংলা
দূর আর্য ভূমি!
মুক্তকণ্ঠে যুক্তকরে ডাকিছে তোমায়,
হে লজ্জাবারিণী।
সাধনার ধন তুমি ভারতবাসীর,---
সহস্র পীড়নে,
উপবাসে, অনশনে ভোলে নাই তোমা।
দুর্বল সন্তানে
দিব্য মন্ত্রে দিব্য স্নেহে দাও স্থান আজি
মন্দিরে তোমার ;
যায় যাক্ থাক্ প্রাণ, সে মন্ত্র শুনিয়া
জাগিব আবার।
হিমাচল হবে দূর কুমারিকা পার
কাননে, প্রান্তরে,
নগরে-নগরে ক্ষুদ্র প্রল্লীতে-পল্লীতে,
প্রাসাদে কুটিরে,
কোটি কোটি মৃত প্রাণ, হোমাগ্নির প্রায়
উঠুক জ্বলিয়া,
মা তোর তাপসী-মূর্তি পূজিবে সন্তান
হিয়া রক্ত দিয়া।
৫. সাধন পথে
কুসুম কুমারী দাশ
এক বিন্দু অমৃতের লাগি
কি আকুল পিপাসিত হিয়া,
এক বিন্দু শান্তির লাগিয়া
কর্মক্লান্ত দুটি বাহু দিয়া---
কাজ শুধু করে যায়
অন্তরেতে দুরন্ত সাধনা,
তুমি তার দীর্ঘ পথে
হবে সাথী একান্ত ভাবনা।
সে জানে এ আরাধনা
কবে তার হইবে সফল;
তব বাণী যেই দিন তারি
ভাষা হয়ে ঘুচাবে সকল
অন্তরের অহঙ্কার,
স্তুতি, নিন্দা, ভয়
সেদিন লভিবে শান্তি,
সংগ্রামে বিজয়।
তোমার স্বরূপে তার রূপ হবে লীন!
সেই তার সাধনার পরম সুদিন।
৬. দাদার চিঠি
কুসুম কুমারী দাশ
আয়রে মনা, ভুতো, বুলী আয়রে তাড়াতাড়ি,
দাদার চিঠি এসেছে আজ, শুনাই তোদের পড়ি।
কলকাতাতে এসেছি ভাই কালকে সকাল বেলা,
হেথায় কত গাড়ি, ঘোড়া, কত লোকের মেলা।
পথের পাশে সারি সারি দু'কাতারে বাড়ি
দিন রাত্তির হুস্ হুস্ করে ছুটেছে রেল গাড়ি।
আমি কি ভাই গেছি বুলে তোদের মলিন মুখ,
মনে পড়লে এখনও যে কেঁপে ওঠে বুক।
সেই যে মায়ের জলে ভরা স্নেহের নয়ন দু'টি
সেই যে আমার হাতটি ছেড়ে দিতে চায় নি পুঁটি---
ভূতি মনার আবদারে ভাব, দাদা, কোথায় যাবে?
যদি তুমি যেতে চাও তো সঙ্গে মোদের নেবে।
সেই যে বুলী ঠোঁট কাপায়ে চুলের গোছা ছেড়ে
যেতে নাহি দিব ব'লে দাঁড়িয়েছিল দোরে---
সেই যে নলিন ষ্টেশন ঘরে চোখে কাপড় দিয়ে
কাঁদছিলি তুই হাতখানি মোর তোর হাতেতে নিয়ে।
সে সব কথা মনে প'ড়ে চোখে আসছে জল
দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ভরা বুকের বল।
এসব কথা মায়ের কাছে বলো নাক' ভাই,
আজকে আমি এখান হ'তে বিদায় হ'তে চাই।
আর এক কথা, নিয়মমত লিখো আমায় চিঠি
কেমন আছে ভূতি, মনা, বুলী, ছোট পুঁটি?
মা বাবাকে প্রণাম দিয়ে বলবে আমার কথা,
সিটি কলেজ খুললে আমি ভর্তি হব তথা।
দু'চার দিন আর আছে বাকি, ভাল আছি আমি আমার হ'য়ে ভাইবোনদের চুমু দিও তুমি।
বিদেশ এলে বুঝতে পারবে কেমন করে প্রাণ,
বুঝেছি ভাই কাকে ব'লে এক রক্তের টান।
এখন আমার চোখের কাছে যেন জগত্খানা
ভাসছে নিয়ে ভূতো, পুঁটি, বুলী, ননী,মনা।''
৭. খোকার বিড়াল ছানা
কুসুম কুমারী দাশ
সোনার ছেলে খোকামণি, তিনটি বিড়াল তার,
একডণ্ড নাহি তাদের করবে চোখের আড়।
খেতে শুতে সকল সময় থাকবে তারা কাছে,
না হ'লে কি খোকামণির খাওয়া দাওয়া আছে?
এত আদর পেয়ে বিড়াছানাগুলি,
দাদা, দিদি, মাসি, পিসি সকল গেছে ভুলি।
সোনামুখী, সোহাগিনী, চাঁদের কণা ব'লে
ডাকে খোকা, ছানাগুলি যায় আদরে গলে।
সোনামুখী সবার বড় খোকার কোলে বসে,
সোহাগিনী ছোটো যেটি বসে মাথার পাশে।
মাঝখানেতে মানে মানে বসে' চাঁদের কণা,
একে একে সবাই কোলে করবে আনাগোনা।
৮. বান্দনা
কুসুম কুমারী দাশ
বিশ্ব আঁধার ভেদিয়া করে বন্দনা
নবীন রক্ত তপন মহান আলোকে।
গরজি গভীর স্বননে ধায় পারাবার
চুমিতে চরণতল অতুল পুলকে!
বনে উপবনে ফোটে কত ফুল
শিশিরসিক্ত নব-লাবণ্যে ভরিয়া
পরিমল শোভা সকলি বিকশি উঠে
তব মধুর পরশ লাগিয়া
দিগ্ দিগন্তে চুমিয়া বহে সমীরণ
কাহারে খুঁজিছে সে দিশেহারা?
শান্ত উদার গগনে, অযুত অযুত তারকা
কৌতুকভরে নেহারে কাহারে তারা?
কুলকুলু নাদে তটিনী ছুটিছে
তার বক্ষে বিপুল বাসনা
প্রেম-পাগল হিয়াখানি আজি
ওই চরণে করিবে লগনা।
গীতগন্ধ ছন্দোময় বিশ্ব
কত বন্দন পাঠায় তোমারি কাছে।
ওগো গম্ভীর, ওগো সুন্দর, ভূবনবাঞ্ছিত
কি দিবে দীন, শুধু করুণা যাচে।
৯. উদ্বধোন
কুসুম কুমারী দাশ
বঙ্গের ছেলে-মেয়ে জাগো, জাগো, জাগো,
পরের করুণা কেন শুধু মাগো---
আপনারে বলে নির্ভর রাখো
হবে জয় নিশ্চয়---
চারিদিকে হেরো কী দুঃখ-দুর্দিন,
কত ভাই বোন অন্ন-বস্ত্র-হীন,
সোনার বাংলা হয়েছে মলিন
কী দীরুণ বেদনায়---
তোমরা জাগিয়া দুঃখ ঘুচালে,
সকলের ব্যথা সকলে বুঝিলে
ত্যাগ, একতায় জাগিয়া উঠিলে,
তবে বঙ্গ রক্ষা পায়।
পৃথিবী জুড়িয়ে যত অভিযান
সকলেই চায় দেশের কল্যাণ (সম্মান)
জননী জন্মভূমির উত্থান,
মানুষ যে সে-ই চায়।
১০. অরূপের রূপ
কুসুম কুমারী দাশ
রূপসিন্ধু মাঝে হেরি অরূপ তোমায়,
হৃদয় ভরিয়া গেল সুধার ধারায়!
কোন্ মৃত্তিকায় খুঁজি কোন তীর্থ-নীরে,
স্ব-প্রকাশ বিরাজিত বিশ্বের মন্দিরে---
উদার আকাশ তল, সিন্ধুর সুনীল জল,
ওই গিরি নির্ঝরিনী অশ্রান্ত উচ্ছল।
প্রান্তর দিগন্ত-লীন শ্যামা মধুরিমা,
প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে কার এ সুষমা?
হায়রে সম্বলহীন, কুণ্ঠা ছিল মনে---
তাঁর দেখা পাবি তুই কবে কোনখানে?
শত হস্ত বাড়ায়ে যে ধরিবারে চায়,
পাই নাই বলে তারে দিবি কি বিদায়?
অন্তরে বাহিরে হের অপূর্ব্ব আলোকে
তাঁরি জ্যোতির্ময় রূপ, দ্য়ুলোকে ভূলোকে!
আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমার লেখার ভিতর যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন,,,,,,,প্লিজ।
পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
No comments