কবি সুকুমার রায় এর কবিতা-সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা কেমন আছেন,,,?? Technical Bangla পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-৬: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি সুকুমার রায় এর লেখা ১১টি কবিতা গুলো সবাই মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. গল্প কথা
সুকুমার রায়
“এক যে রাজা”–”থাম্ না দাদা,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা৷”
“তার যে মাতুল”–”মাতুল কি সে?-
সবাই জানে সে তার পিশে”
“তার ছিল এক ছাগল ছানা”-
“ছাগলের কি গজায় ডানা?”
“একদিন তার ছাতের ‘পরে”-
“ছাত কোথা হে টিনের ঘরে?”
“বাগানের এক উড়ে মালী”-
“মালী নয়তো! মেহের আলী৷”
“মনের সাধে গাইছে বেহাগ”-
“বেহাগ তো নয়! বসন্ত রাগ৷”
“থও না বাপু ঘ্যাঁচা ঘেঁচি”-
“আচ্ছা বল, চুপ করেছি৷”
“এমন সময় বিছনা ছেড়ে,
হঠাৎ মামা আস্ল তেড়ে,
ধর্ল সে তার ঝুঁটির গোড়া”-
“কোথায় ঝুঁটি? টাক যে ভরা৷”
“হোক না টেকো তোর তাতে কি?
লক্ষীছাড়া মুখ্যু ঢেঁকি!
ধর্ব ঠেসে টুঁটির ‘পরে,
পিটব তোমার মুণ্ড ধ’রে-
কথার উপর কেবল কথা,
এখন বাপু পালাও কোথা?”
২. সাবধান
সুকুমার রায়
আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস?
ফোঁস্ ফোঁস্ অত জোরে ফেলোনাকো নিশ্বাস।
জানোনা কি সে বছর ওপাড়ার ভূতোনাথ,
নিশ্বাস নিতে গিয়ে হয়েছিল কুপোকাৎ?
হাঁপ ছাড় হ্যাঁস্ফ্যাঁস্ ও রকম হাঁ করে-
মুখে যদি ঢুকে বসে পোকা মাছি মাকড়ে?
বিপিনের খুড়ো হয় বুড়ো সেই হল’ রায়,
মাছি খেয়ে পাঁচ মাস ভুগেছিল কলেরায়।
তাই বলি- সাবধান! ক’রোনাকো ধুপ্ধাপ্,
টিপি টিপি পায় পায় চলে যাও চুপ্ চাপ্।
চেয়োনাকো আগে পিছে, যেয়োনাকো ডাইনে
সাবধানে বাঁচে লোকে,- এই লেখে আইনে।
পড়েছ ত কথা মালা? কে যেন সে কি করে
পথে যেতে পড়ে গেল পাতকো’র ভিতরে?
ভালো কথা- আর যেন সকালে কি দুপুরে,
নেয়োনাকো কোনো দিন ঘোষেদের পুকুরে,
এরকম মোটা দেহে কি যে হবে কোন্ দিন,
কথাটাকে ভেবে দেখ কি রকম সঙ্গিন!
চটো কেন? হয় নয় কে বা জানে পষ্ট,
যদি কিছু হ’য়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট।
মিছিমিছি ঘ্যান্ ঘ্যান্ কেন কর তক্ক?
শিখেছ জ্যাঠামো খালি, ইঁচরেতে পক্ক,
মানবে না কোন কথা চলা ফেরা আহারে,
একদিন টের পাবে ঠেলা কয় কাহারে।
রমেশের মেঝ মামা সেও ছিল সেয়না,
যত বলি ভালো কথা কানে কিছু নেয়না
শেষকালে একদিন চান্নির বাজারে
প’ড়ে গেল গাড়ি চাপা রাস্তার মাঝারে!
৩. চোর ধরা
সুকুমার রায়
আর ছি ছি! রাম রাম! ব’লো না হে ব’লো না-
চলছে যা জুয়াচুরি, নাহি তার তুলনা।
যেই আমি দেই ঘুম টিফিনের আগেতে,
ভয়ানক ক’মে যায় খাবারের ভাগেতে।
রোজ দেখি খেয়ে গেছে, জানিনেকো কারা সে-
কালকে যা হ’য়ে গেল ডাকাতির বাড়া সে!
পাঁচ খানা কাট্লেট, লুচি তিন গন্ডা,
গোটা দুই জিবে গজা ,গুটি দুই মন্ডা,
আরো কত ছিল পাতে আলু ভাজা ঘুঙনি-
ঘুম থেকে উঠে দেখি পাতখানা শুন্যি!
তাই আজ ক্ষেপে গেছি- কত আর পারব?
এতদিন স’য়ে স’য়ে এই বারে মারব।
খাড়া আছি সারাদিন হুসিয়ার পাহারা ,
দেখে নেব রোজ রোজ খেয়ে যায় কাহারা।
রামু হও দামু হও, ও পাড়ার ঘোষ বোস-
যেই হও এই বারে থেমে যাবে ফোঁস ফোঁস।
খাটবে না জারিজুরি আঁটবে না মার প্যাঁচ্,
যারে পাব ঘাড়ে ধ’রে কেটে দেব ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ
এই দেখ ঢাল নিয়ে খাড়া আছি আড়ালে,
এই বারে টের পাবে মুন্ডুটা বাড়ালে।
রোজ বলি “সাবধান” কানে তবু যায় না?
ঠেলাখানা বুঝবি ত এইবারে আয় না!
৪. অন্ধ মেয়ে
সুকুমার রায়
গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
সবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি!
অন্ধ মেয়ে দেখছে না তা - নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরয কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আঁধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।।
৫. অসম্ভব নয়
সুকুমার রায়
এক যে ছিল সাহেব, তাহার
গুণের মধ্যে নাকের বাহার।
তার যে গাধা বাহন, সেটা
যেমন পেটুক তেমনি ঢ্যাঁটা।
ডাইনে বল্লে যায় সে বামে
তিন পা যেতে দুবার থামে ।
চল্তে চল্তে থেকে থেকে
খানায় খন্দে পড়ে বেঁকে।
ব্যাপার দেখে এম্নিতরো
সাহেব বললে সবুর করো-
মাম্দোবাজি আমার কাছে?
এ রোগেরও ওষুধ আছে।
এই না বলে ভীষন ক্ষেপে
গাধার পিঠে বস্ল চেপে
মুলোর ঝুটি ঝুলিয়ে নাকে
আর কি গাধা ঝিমিয়ে থাকে?
মুলোর গন্ধে টগবগিয়ে
দৌড়ে চলে লম্ফ দিয়ে -
যতই ছোটে ধরব ব'লে
ততই মুলো এগিয়ে চলে !
খাবার লোভে উদাস প্রাণে
কেবল ছোটে মুলোর টানে -
ডাইনে বাঁয়ে মুলোর তালে
ফেরেন গাধা নাকের চালে।
৬. আজব খেলা
সুকুমার রায়
সোনার মেঘে আল্তা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাঁঝে সূর্যি মামা নিত্যি আসে যায়।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ'রে ভ'রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নূতন ক'রে।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আল জ্বেলে
সাঁঝের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে।
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন।
ফুরায় নাকি সোনার খেলা? রঙের নাহি পার?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্ছে জেগে- সেই কথা কি সুর্যিমামা জানে?
৭. আনন্দ
সুকুমার রায়
যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা ,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।
৮. আবোল তাবোল
সুকুমার রায়
আয়রে ভোলা খেয়াল‐খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।...
আয় ক্ষ্যাপা‐মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে—
আয়রে তবে ভুলের ভবে
অসম্ভবের ছন্দেতে॥
৯. আয়রে আলো আয়
সুকুমার রায়
পুব গগনে রাত পোহাল,
ভোরের কোণে লাজুক আলো
নয়ন মেলে চায়।
আকাশতলে ঝলক জ্বলে,
মেঘের শিশু খেলার ছলে
আলোক মাখে গায়।।
সোনার আলো, রঙিন্ আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো-
আয়রে আলো আয়।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত ক'রে
আলোর ঝরণায়।।
ঘুম ভাঙান পাখির তানে
জাগ্রে আলো আকুল গানে
আকূল নীলিমায়।
আলসভরা আঁখির কোণে,
দুঃখ ভয়ে আঁধার মনে,
আয়রে আলো আয়।।
১০. কিছুু চাই
সুকুমার রায়
কারোর কিছু চাই গো চাই ?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই?
জলছবি আর লাট্টু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্ পেনসিল রবার ছুরি?
এসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
বৌমা কি চাও শুনতে পাই?
ছিটের কাপড় চিকন লেস্
ফ্যান্সি জিনিস ছুঁচের কেস্
আল্তা সিঁদুর কুন্তলীন
কাঁচের চুড়ি বোতাম পিন্?
আমার কাছে ওসব নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
আপনি কি চান কর্তামশাই?
পকেট বই কি খেলার তাস
চুলের কলপ জুতোর ব্রাশ্
কলম কালি গঁদের তুলি
নস্যি চুরুট সুর্তি গুলি?
ওসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
১১. দাদা গো দাদা
সুকুমার রায়
দাদা গো দাদা, সত্যি তোমার সুরগুলো খুব খেলে!
এম্নি মিঠে- ঠিক যেন কেউ গুড় দিয়েছে ঢেলে!
দাদা গো দাদা, এমন খাসা কণ্ঠ কোথায় পেলে?-
এই খেলে যা! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে?
দাদা গো দাদা, পায়ে পড়ি তোর, ভয় পেয়ে যায় ছেলে-
গাইবে যদি ঐখেনে গাও, ঐ দিকে মুখ মেলে ।
সুকুমার রায়ের ১১টি মজার কবিতা দেওয়া হয়েছে।আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্ব পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
হ্যালো বন্ধুরা কবিতা পর্ব-৬: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি সুকুমার রায় এর লেখা ১১টি কবিতা গুলো সবাই মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো-
১. গল্প কথা
সুকুমার রায়
“এক যে রাজা”–”থাম্ না দাদা,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা৷”
“তার যে মাতুল”–”মাতুল কি সে?-
সবাই জানে সে তার পিশে”
“তার ছিল এক ছাগল ছানা”-
“ছাগলের কি গজায় ডানা?”
“একদিন তার ছাতের ‘পরে”-
“ছাত কোথা হে টিনের ঘরে?”
“বাগানের এক উড়ে মালী”-
“মালী নয়তো! মেহের আলী৷”
“মনের সাধে গাইছে বেহাগ”-
“বেহাগ তো নয়! বসন্ত রাগ৷”
“থও না বাপু ঘ্যাঁচা ঘেঁচি”-
“আচ্ছা বল, চুপ করেছি৷”
“এমন সময় বিছনা ছেড়ে,
হঠাৎ মামা আস্ল তেড়ে,
ধর্ল সে তার ঝুঁটির গোড়া”-
“কোথায় ঝুঁটি? টাক যে ভরা৷”
“হোক না টেকো তোর তাতে কি?
লক্ষীছাড়া মুখ্যু ঢেঁকি!
ধর্ব ঠেসে টুঁটির ‘পরে,
পিটব তোমার মুণ্ড ধ’রে-
কথার উপর কেবল কথা,
এখন বাপু পালাও কোথা?”
২. সাবধান
সুকুমার রায়
আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস?
ফোঁস্ ফোঁস্ অত জোরে ফেলোনাকো নিশ্বাস।
জানোনা কি সে বছর ওপাড়ার ভূতোনাথ,
নিশ্বাস নিতে গিয়ে হয়েছিল কুপোকাৎ?
হাঁপ ছাড় হ্যাঁস্ফ্যাঁস্ ও রকম হাঁ করে-
মুখে যদি ঢুকে বসে পোকা মাছি মাকড়ে?
বিপিনের খুড়ো হয় বুড়ো সেই হল’ রায়,
মাছি খেয়ে পাঁচ মাস ভুগেছিল কলেরায়।
তাই বলি- সাবধান! ক’রোনাকো ধুপ্ধাপ্,
টিপি টিপি পায় পায় চলে যাও চুপ্ চাপ্।
চেয়োনাকো আগে পিছে, যেয়োনাকো ডাইনে
সাবধানে বাঁচে লোকে,- এই লেখে আইনে।
পড়েছ ত কথা মালা? কে যেন সে কি করে
পথে যেতে পড়ে গেল পাতকো’র ভিতরে?
ভালো কথা- আর যেন সকালে কি দুপুরে,
নেয়োনাকো কোনো দিন ঘোষেদের পুকুরে,
এরকম মোটা দেহে কি যে হবে কোন্ দিন,
কথাটাকে ভেবে দেখ কি রকম সঙ্গিন!
চটো কেন? হয় নয় কে বা জানে পষ্ট,
যদি কিছু হ’য়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট।
মিছিমিছি ঘ্যান্ ঘ্যান্ কেন কর তক্ক?
শিখেছ জ্যাঠামো খালি, ইঁচরেতে পক্ক,
মানবে না কোন কথা চলা ফেরা আহারে,
একদিন টের পাবে ঠেলা কয় কাহারে।
রমেশের মেঝ মামা সেও ছিল সেয়না,
যত বলি ভালো কথা কানে কিছু নেয়না
শেষকালে একদিন চান্নির বাজারে
প’ড়ে গেল গাড়ি চাপা রাস্তার মাঝারে!
৩. চোর ধরা
সুকুমার রায়
আর ছি ছি! রাম রাম! ব’লো না হে ব’লো না-
চলছে যা জুয়াচুরি, নাহি তার তুলনা।
যেই আমি দেই ঘুম টিফিনের আগেতে,
ভয়ানক ক’মে যায় খাবারের ভাগেতে।
রোজ দেখি খেয়ে গেছে, জানিনেকো কারা সে-
কালকে যা হ’য়ে গেল ডাকাতির বাড়া সে!
পাঁচ খানা কাট্লেট, লুচি তিন গন্ডা,
গোটা দুই জিবে গজা ,গুটি দুই মন্ডা,
আরো কত ছিল পাতে আলু ভাজা ঘুঙনি-
ঘুম থেকে উঠে দেখি পাতখানা শুন্যি!
তাই আজ ক্ষেপে গেছি- কত আর পারব?
এতদিন স’য়ে স’য়ে এই বারে মারব।
খাড়া আছি সারাদিন হুসিয়ার পাহারা ,
দেখে নেব রোজ রোজ খেয়ে যায় কাহারা।
রামু হও দামু হও, ও পাড়ার ঘোষ বোস-
যেই হও এই বারে থেমে যাবে ফোঁস ফোঁস।
খাটবে না জারিজুরি আঁটবে না মার প্যাঁচ্,
যারে পাব ঘাড়ে ধ’রে কেটে দেব ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ
এই দেখ ঢাল নিয়ে খাড়া আছি আড়ালে,
এই বারে টের পাবে মুন্ডুটা বাড়ালে।
রোজ বলি “সাবধান” কানে তবু যায় না?
ঠেলাখানা বুঝবি ত এইবারে আয় না!
৪. অন্ধ মেয়ে
সুকুমার রায়
গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
সবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি!
অন্ধ মেয়ে দেখছে না তা - নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরয কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আঁধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।।
৫. অসম্ভব নয়
সুকুমার রায়
এক যে ছিল সাহেব, তাহার
গুণের মধ্যে নাকের বাহার।
তার যে গাধা বাহন, সেটা
যেমন পেটুক তেমনি ঢ্যাঁটা।
ডাইনে বল্লে যায় সে বামে
তিন পা যেতে দুবার থামে ।
চল্তে চল্তে থেকে থেকে
খানায় খন্দে পড়ে বেঁকে।
ব্যাপার দেখে এম্নিতরো
সাহেব বললে সবুর করো-
মাম্দোবাজি আমার কাছে?
এ রোগেরও ওষুধ আছে।
এই না বলে ভীষন ক্ষেপে
গাধার পিঠে বস্ল চেপে
মুলোর ঝুটি ঝুলিয়ে নাকে
আর কি গাধা ঝিমিয়ে থাকে?
মুলোর গন্ধে টগবগিয়ে
দৌড়ে চলে লম্ফ দিয়ে -
যতই ছোটে ধরব ব'লে
ততই মুলো এগিয়ে চলে !
খাবার লোভে উদাস প্রাণে
কেবল ছোটে মুলোর টানে -
ডাইনে বাঁয়ে মুলোর তালে
ফেরেন গাধা নাকের চালে।
৬. আজব খেলা
সুকুমার রায়
সোনার মেঘে আল্তা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাঁঝে সূর্যি মামা নিত্যি আসে যায়।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ'রে ভ'রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নূতন ক'রে।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আল জ্বেলে
সাঁঝের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে।
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন।
ফুরায় নাকি সোনার খেলা? রঙের নাহি পার?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্ছে জেগে- সেই কথা কি সুর্যিমামা জানে?
৭. আনন্দ
সুকুমার রায়
যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা ,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।
৮. আবোল তাবোল
সুকুমার রায়
আয়রে ভোলা খেয়াল‐খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।...
আয় ক্ষ্যাপা‐মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে—
আয়রে তবে ভুলের ভবে
অসম্ভবের ছন্দেতে॥
৯. আয়রে আলো আয়
সুকুমার রায়
পুব গগনে রাত পোহাল,
ভোরের কোণে লাজুক আলো
নয়ন মেলে চায়।
আকাশতলে ঝলক জ্বলে,
মেঘের শিশু খেলার ছলে
আলোক মাখে গায়।।
সোনার আলো, রঙিন্ আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো-
আয়রে আলো আয়।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত ক'রে
আলোর ঝরণায়।।
ঘুম ভাঙান পাখির তানে
জাগ্রে আলো আকুল গানে
আকূল নীলিমায়।
আলসভরা আঁখির কোণে,
দুঃখ ভয়ে আঁধার মনে,
আয়রে আলো আয়।।
১০. কিছুু চাই
সুকুমার রায়
কারোর কিছু চাই গো চাই ?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই?
জলছবি আর লাট্টু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্ পেনসিল রবার ছুরি?
এসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
বৌমা কি চাও শুনতে পাই?
ছিটের কাপড় চিকন লেস্
ফ্যান্সি জিনিস ছুঁচের কেস্
আল্তা সিঁদুর কুন্তলীন
কাঁচের চুড়ি বোতাম পিন্?
আমার কাছে ওসব নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
আপনি কি চান কর্তামশাই?
পকেট বই কি খেলার তাস
চুলের কলপ জুতোর ব্রাশ্
কলম কালি গঁদের তুলি
নস্যি চুরুট সুর্তি গুলি?
ওসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
১১. দাদা গো দাদা
সুকুমার রায়
দাদা গো দাদা, সত্যি তোমার সুরগুলো খুব খেলে!
এম্নি মিঠে- ঠিক যেন কেউ গুড় দিয়েছে ঢেলে!
দাদা গো দাদা, এমন খাসা কণ্ঠ কোথায় পেলে?-
এই খেলে যা! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে?
দাদা গো দাদা, পায়ে পড়ি তোর, ভয় পেয়ে যায় ছেলে-
গাইবে যদি ঐখেনে গাও, ঐ দিকে মুখ মেলে ।
সুকুমার রায়ের ১১টি মজার কবিতা দেওয়া হয়েছে।আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্ব পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
No comments