কবি শামসুর রহমান এর কবিতা-সমূহ
হ্যালো বন্ধুরা,আমি নয়ন আছি আপনাদের সাথে, কবিতা পর্ব -৪: এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।।আমি আজকে নিয়ে আসলাম কবি শামসুল রহমান লেখা ১৫টি কবিতা।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো:-
১. মেঘনা নদীর তীরে
শামসুর রহমান
মেঘনা নদীর তীরে যদি
একটুখানি যাও,
তখন তুমি দেখতে পাবে
নানা রূপের নাও।
ঢেউয়ের মাথায় ডিঙি চলে
নাচের তালে তালে,
মেশিন-অলা নৌকা যেন
ওড়ে নদীর গালে।
মেঘনা নদীর তীরে আছে
পাড়াতলী গাঁও,
তোমায় নেবে বুকে টেনে
দেখতে যদি চাও।
দেখবে তুমি সর্ষে ক্ষেতে
প্রজাপতির মেলা;
সূর্য ডোবার পরেই চলে
জোনাক পোকার খেলা।
২. ময়নামতীর ঘাটে
শামসুর রহমান
সানাই বাজে মধুর সুরে
তেপান্তরের মাঠে,
কঙ্কাবতী সাঁতার কাটে
ময়নামতীর ঘাটে।
সাঁঝের বেলা দেখেন কবি
জলের পরী একা-
তাকে নিয়ে রাতের বেলা
পদ্য যাবে লেখা।
খানিক পরেই হঠাৎ পরী
হয়ে গেলো হাওয়া;
ভাবেন কবি, কোথায় গেলে
তাকে যাবে পাওয়া?
এক নিমেষে সূয্যি মামা
গেলেন চলে পাটে;
একলা বসে থাকেন কবি
ময়নামতীর ঘাটে।
৩. ফুটলো হাসি
শামসুর রহমান
হাঁটতে গিয়ে আমরা ক’জন
বিকেল বেলা
দিঘির পথে দেখি হঠাৎ
পাখির মেলা।
হলদে, কালো, লালচে, সাদা
হরেক পাখি।
আমরা ওদের আদর করে,
কাছে ডাকি।
মনে হলো, হঠাৎ ওরা
মাতলো নাচে।
ছড়ার ঢঙে দুলে দুলে
আসছে কাছে।
খুশিতে মন উঠলো বেজে,
যেন বাঁশি।
সবার মুখে ফুলের মতো
ফুটলো হাসি।
৪. বোবা ওঝা
শামসুর রহমান
আমায় দেখে হঠাৎ বলো
হাসছো কেন কেমন করে?
মাথায় আমার শিং ফুটেছে?
চোখ দুটো কি তৈরি খড়ে?
সত্যি করে বলো শুনি-
গজালো কি লেজুড় কোনও?
মুখ কি আমার প্যাঁচার মতো-
বলতে হবে, বন্ধু শোনো।
এই যে আমি বলছি কথা,
সে কথা কি যাচ্ছে বোঝা?
না কি শুধুই কিচির মিচির
করছে শুধু বোবা ওঝা।
৫. বাংলাদেশের স্বাধীনতা
শামসুর রহমান
পশ্চিমা যত লুটেরা সবাই
বাংলাদেশের সোনা রূপা সব
লুট করে নিয়ে গেছে বার বার
বাঙালির ভাই সেজে রাত-দিন
কাঁধে কাঁধ রোজ মিলিয়ে আখেরে
ভরা ভাণ্ডার করেছে উজাড়।
হায়! বেশ কিছু বাজে, মতলবি
বাঙালি ওদের খুশি করবার
জন্য দেশের ক্ষতিতে নামলো।
পাকিস্তানীরা যা-ই বলে ওরা
তাই করে ঠোঁট হাসিতে সাজিয়ে।
অবশ্য পরে সে কাজ থামলো।
শেষে হারমাদ পশ্চিমা সব
শক্ররা সব মানলো, বিজয়ী
মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের কাছে
কিন্তু এখনো স্বাধীনতাময় জ্বল জ্বলে পথে
সবকিছু ঠিক নয় মসৃণ
আজো পথে কিছু কালো কাঁটা আছে।
৬. আচ্ছা যদি সাত আকাশে
শামসুর রহমান
পথের ধারে ছিল পড়ে
ছোট্র মতো কী-যে!
ন্যাকড়া না কি? পুঁটলি কোনো
শুকনো কিংবা ভিজে?
মেঘ-মুলুকে উড়ছে একা
হলদে পাখার পাখি।
ইচ্ছে জাগে ওকে আমার
হাতটি নেড়ে ডাকি।
রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে
কী-যে স্বপ্ন দেখি-
পক্ষীরাজের পিঠে বসে
মজার ছড়া লেখি।
হঠাৎ দেখি দশটি তারা
উঠোন জুড়ে নাচে।
সাতটি পরী দোলায় মাথা
জ্যোৎস্না মাখা গাছে।
আচ্ছা যদি সাত আকাশে
বেড়াই আমি উড়ে,-
পাবো কি এক হীরের বাড়ি
মেঘের পাড়া ঘুরে?
৭. আলোর পাখি
শামসুর রহমান
লোকটা নানা রঙের এক
পোশাক পঁরে ঘোরে,
গভীর রাতে দূর আকাশে
পাখির মতো ওড়ে।
সবাই যখন ঘর বাড়িতে
ঘুমের ছায়ায় থাকে,
লোকটা তখন ওদের ঘুমে
নানা স্বপ্ন আঁকে।
তখন তাকে কেউ দেখে না,
ঘুম আসে না বলে
কেবল দেখি আলোর মতো
পাখির ডানা জ্বলে!
৮. খোকা দাদুর খাতা
শামসুর রহমান
খোকার দাদুর ছিল বটে
একটা মজার খাতা।
সেই খাতাতে ছিল আঁটা
অনেকগুলো পাতা।
একটা পাতা যেতো উড়ে
তেপান্তরের মাঠে।
অন্য পাতা বসতো গিয়ে
কঙ্কাবতীর ঘাটে।
হঠাৎ কোনো পাতা গিয়ে
ভাসতো সমুদ্দুরে।
একটি পাতা পরীর দেশে
নৃত্য দিতো জুড়ে।
খোকার দাদু খাতার কানে
মন্ত্র দিতেন ফুঁকে।
ফুঁকের গুণে হরেক পাতা
উড়তো বেজায় সুখে।
খোকার দাদুর খাতা নিয়ে
ঘুরতো পরীর দেশে।
পরীরা সব খোকার সাথে
নাচতো মধুর হেসে।
৯. ছোট্ট খেলাঘর
শামসুর রহমান
দীপিতা, তোর খেলাঘরে
আমায় নিবি না কি?
পড়ার ঘরে আর কত ভাই
একলা বসে থাকি?
তোর সে ছোট্র খেলাঘরে
অনেক মজা আছে,
সেখানে তো পুতুলগুলো
মজার ছন্দে নাচে।
আমি তো তোর সঙ্গে রোজই
লেখতে ভালোবাসি,
তাই না মজার খেলাঘরে
দৌড়ে চলে আসি।
খেলতে খেলতে সন্ধেবেলা
যাস তো পরীর দেশে।
সেখানে তোর সময় কাটে
চাঁদের ভেলায় ভেসে।
সঙ্গে নিলে দাদুটিকে
নাচবো আমি সুখে,
চাঁদের শোভা ক্ষণে ক্ষণে
জাগবে আমার মুখে।
দে না রে ভাই দুটি পাখা
আমার কাঁধে জুড়ে,
তাহলে ওই চাঁদের দেশে
গাইবো ছড়ার সুরে।
১০. দীপিতা আর পাখি
শামসুর রহমান
দীপিতা খুব সকাল বেলা
দিলো জুড়ে মজার খেলা
হাতে নিয়ে হলদে পাখি।
যতই তাকে কাছে ডাকি,
মোটেও সে দেয় না সাড়া।
পছন্দ তার পাখির পাড়া।
নানা রঙের পাখি তাকে
মজার নাচে ঘিরে থাকে।
দীপিতা ওর গানের সুরে
দিলো পাখির আসর জুড়ে।
হঠাৎ এক শব্দ হতেই
দেখি চেয়ে পাখিরা নেই।
দীপিতা ওর কোলে একি
রক্তমাখা পাখি দেখি!
কোন শিকারী ছুঁড়ে গুলি
শিকার দিয়ে ভরে ঝুলি?
যখন করে ছোট্র শিকার,
কাঁপে নাকি হাতটি তার?
১১. দীপিতার বায়না
শামসুর রহমান
দীপিতা কয়, ‘আচ্ছা দাদু,
দিন দুপুরে, বিকেল বেলা
খাতার বুকে হরফ এঁকে
খেলছো তুমি কেমন খেলা?
তোমায় দেখি আড়াল থেকে-
তাকাও তুমি দূরের মেঘে,
দেখি মজার ঝর্ণাকলম
খাতার পাতায় থাকে লেগে।
এই যে তুমি খাতা জুড়ে
নক্শা আঁকো শব্দ দিয়ে-
সেসব মজার শব্দ বুঝি
দিচ্ছে তোমায় আজব টিয়ে’।
‘আচ্ছা দাদু, আমায় তুমি
দাও শিখিয়ে তেমন খেলা,
যার জাদুতে বাল্য শিক্ষা
হয়ে যাবে তারার মেলা’।
বলেন দাদু, ‘শোন দীপিতা,
তুই যদি এই খাতায় এসে
কলমটাকে চালিয়ে দিস,
খাতা যাবে আলোয় ভেসে’।
১২. গোলাপের উদ্দেশে নয়না
শামসুর রহমান
গোলাপ তুমি গাছের ডালে
কেমন ক’রে ফোটো?
ঘুম জড়ানো খুব সকালে
কী করে বোন ওঠো?
জগৎ জোড়া সুনাম তোমার
সত্যি বলে জানি।
সবাই তোমায় ভালোবেসে
ডাকে ফুলের রানী।
তোমার ঘ্রাণে সবার প্রাণে
খুশির দোলা লাগে;
কারো কারো মনে আবার
ছড়ার ছন্দ জাগে।
তোমায় নিয়ে কত কবি
পদ্য লেখেন সুখে,
থাকো তুমি ফুলবাগানে
সদাই হাসিমুখে।
জানি তোমার রূপ পাবো না
শত চেষ্টা করে,
যেন ঘ্রাণের মতোই গুণে
মনটি ওঠে ভরে।
১৩. বাড়ি
শামসুর রহমান
বাড়ি করছেন,
আশমান-ছোঁয়া
বাড়ি করছেন!
উনি করছেন,
তিনি করছেন,
দোতলা তেতলা
বাড়ি করছেন।
লেনে বাইলেনে
রাস্তার ধারে,
পুকুরে পাড়ে,
বাড়ি করছেন।
বগর বাজিয়ে
কেমন গাজিয়ে
বাড়ি করছেন।
খোকা খুকুমণি
বাজাও এখুনি
বাজাও হে তালি।
হাত বড় টান,
তবু আলিশান
বাড়ি করছেন
মীর করমালি।
মেরে কিছু মাছি
এ শহরে আছি।
সাত তাড়াতাড়ি
এখনো গড়তে
পারিনিতো বাড়ি।
তবু সান্ত্বনা
আছে এক কণা।
মেঘ-মুল্লুকে
আমি মহাসুখে
গড়েছি মহল!
করিনি খরচ
এক কানাকড়ি।
আমার মহল
বিনি আলোতেই
করে ঝ।
সেখানে নিত্য
খুব সুন্দরী
লাল নীল পরী
দিচ্ছে টহল।
১৪. সাত সাগরের বুড়ো
শামসুর রহমান
সেই যে কবে চাপলো কাঁধে
সাত সাগরের বুড়ো,
হিসেব কষে দেখছি হলো
হাজার বছর পুরো।
দুধ আনো হে, তামাক আনো’,
বলে কাঁধের বুড়ো,
জলদি আনো কড়াই থেকে
মাছের ল্যাজা মুড়ো।
নইলে বাছা লাথির চোটে
করবো পাঁজর গুঁড়ো।
তোমরা খেয়ো মাঝে মাঝে
মজা খুদের কুঁড়ো।
‘কাঁধ ছেড়ে আর নামছি না তো
নেইকো তাড়াহুড়ো।
মাথায় নিয়ে নাচো সবাই,
গানটি সাথে জুড়ো’।
এই না বলে তুলতে থাকে
সাত সাগরের বুড়ো,
হিসেব কষে দেখছি হলো
হাজার বছর পুরো।
১৫. বৃষ্টি পড়ে
শামসুর রহমান
বৃষ্টি পড়ে ঝমঝমিয়ে আকাশ ফেটে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
শুকনো জমি ফোঁটাগুলো খাচ্ছে চেটে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে পাড়াতলীর ধুধু চরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে গরিব চাষির কুঁড়েঘরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে চিকন সবুজ ডুমুর পাতায়,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে খইয়ের মতো, জুঁইয়ের মতো,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে অষ্টপ্রহর অবিরত,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে আঁধার ঢাকা ছোট্র গাঁয়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ঘাটে-বাঁধা ডিঙি নায়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে হারান মাঝির উঠোন জুড়ে,
বৃষ্টি পড়ে,বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে কাজী বাড়ির তাল পুকুরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে, দিচ্ছে উঁকি ছেলেবেলা,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে চলছে দুলে সাধের ভেলা,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে এই শহরে গলির মোড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে আজিমপুরের নতুন গোরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ফ্ল্যাট বাড়ির খোলা ছাদে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
খোলার ঘরে কালো মেয়ে খোঁপা বাঁধে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ঘুমের ভেতর গহীন গাঙে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে মধ্যরাতে স্বপ্ন ভাঙে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ময়ূরপঙ্খী নায়ের দাঁড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে মায়াপুরীর সিংহদ্বারে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে অনেক দূরের পাহাড়পুরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে একলা কবির ছাপরা কুঁড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
লেখার ভিতরে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে।তাহলে সবাই ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
আজকের পর্বে আমরা ১৫ টা কবিতা দিয়েছি।কবিতা গুলো আসলেই অনেক সুন্দর।এই পেজ গুলো কে আস্তে আস্তে আপডেট করা হবে,,,ইনশাল্লাহ।আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
চলুন দেখে আসি কবিতা গুলো:-
১. মেঘনা নদীর তীরে
শামসুর রহমান
মেঘনা নদীর তীরে যদি
একটুখানি যাও,
তখন তুমি দেখতে পাবে
নানা রূপের নাও।
ঢেউয়ের মাথায় ডিঙি চলে
নাচের তালে তালে,
মেশিন-অলা নৌকা যেন
ওড়ে নদীর গালে।
মেঘনা নদীর তীরে আছে
পাড়াতলী গাঁও,
তোমায় নেবে বুকে টেনে
দেখতে যদি চাও।
দেখবে তুমি সর্ষে ক্ষেতে
প্রজাপতির মেলা;
সূর্য ডোবার পরেই চলে
জোনাক পোকার খেলা।
২. ময়নামতীর ঘাটে
শামসুর রহমান
সানাই বাজে মধুর সুরে
তেপান্তরের মাঠে,
কঙ্কাবতী সাঁতার কাটে
ময়নামতীর ঘাটে।
সাঁঝের বেলা দেখেন কবি
জলের পরী একা-
তাকে নিয়ে রাতের বেলা
পদ্য যাবে লেখা।
খানিক পরেই হঠাৎ পরী
হয়ে গেলো হাওয়া;
ভাবেন কবি, কোথায় গেলে
তাকে যাবে পাওয়া?
এক নিমেষে সূয্যি মামা
গেলেন চলে পাটে;
একলা বসে থাকেন কবি
ময়নামতীর ঘাটে।
৩. ফুটলো হাসি
শামসুর রহমান
হাঁটতে গিয়ে আমরা ক’জন
বিকেল বেলা
দিঘির পথে দেখি হঠাৎ
পাখির মেলা।
হলদে, কালো, লালচে, সাদা
হরেক পাখি।
আমরা ওদের আদর করে,
কাছে ডাকি।
মনে হলো, হঠাৎ ওরা
মাতলো নাচে।
ছড়ার ঢঙে দুলে দুলে
আসছে কাছে।
খুশিতে মন উঠলো বেজে,
যেন বাঁশি।
সবার মুখে ফুলের মতো
ফুটলো হাসি।
৪. বোবা ওঝা
শামসুর রহমান
আমায় দেখে হঠাৎ বলো
হাসছো কেন কেমন করে?
মাথায় আমার শিং ফুটেছে?
চোখ দুটো কি তৈরি খড়ে?
সত্যি করে বলো শুনি-
গজালো কি লেজুড় কোনও?
মুখ কি আমার প্যাঁচার মতো-
বলতে হবে, বন্ধু শোনো।
এই যে আমি বলছি কথা,
সে কথা কি যাচ্ছে বোঝা?
না কি শুধুই কিচির মিচির
করছে শুধু বোবা ওঝা।
৫. বাংলাদেশের স্বাধীনতা
শামসুর রহমান
পশ্চিমা যত লুটেরা সবাই
বাংলাদেশের সোনা রূপা সব
লুট করে নিয়ে গেছে বার বার
বাঙালির ভাই সেজে রাত-দিন
কাঁধে কাঁধ রোজ মিলিয়ে আখেরে
ভরা ভাণ্ডার করেছে উজাড়।
হায়! বেশ কিছু বাজে, মতলবি
বাঙালি ওদের খুশি করবার
জন্য দেশের ক্ষতিতে নামলো।
পাকিস্তানীরা যা-ই বলে ওরা
তাই করে ঠোঁট হাসিতে সাজিয়ে।
অবশ্য পরে সে কাজ থামলো।
শেষে হারমাদ পশ্চিমা সব
শক্ররা সব মানলো, বিজয়ী
মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের কাছে
কিন্তু এখনো স্বাধীনতাময় জ্বল জ্বলে পথে
সবকিছু ঠিক নয় মসৃণ
আজো পথে কিছু কালো কাঁটা আছে।
৬. আচ্ছা যদি সাত আকাশে
শামসুর রহমান
পথের ধারে ছিল পড়ে
ছোট্র মতো কী-যে!
ন্যাকড়া না কি? পুঁটলি কোনো
শুকনো কিংবা ভিজে?
মেঘ-মুলুকে উড়ছে একা
হলদে পাখার পাখি।
ইচ্ছে জাগে ওকে আমার
হাতটি নেড়ে ডাকি।
রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে
কী-যে স্বপ্ন দেখি-
পক্ষীরাজের পিঠে বসে
মজার ছড়া লেখি।
হঠাৎ দেখি দশটি তারা
উঠোন জুড়ে নাচে।
সাতটি পরী দোলায় মাথা
জ্যোৎস্না মাখা গাছে।
আচ্ছা যদি সাত আকাশে
বেড়াই আমি উড়ে,-
পাবো কি এক হীরের বাড়ি
মেঘের পাড়া ঘুরে?
৭. আলোর পাখি
শামসুর রহমান
লোকটা নানা রঙের এক
পোশাক পঁরে ঘোরে,
গভীর রাতে দূর আকাশে
পাখির মতো ওড়ে।
সবাই যখন ঘর বাড়িতে
ঘুমের ছায়ায় থাকে,
লোকটা তখন ওদের ঘুমে
নানা স্বপ্ন আঁকে।
তখন তাকে কেউ দেখে না,
ঘুম আসে না বলে
কেবল দেখি আলোর মতো
পাখির ডানা জ্বলে!
৮. খোকা দাদুর খাতা
শামসুর রহমান
খোকার দাদুর ছিল বটে
একটা মজার খাতা।
সেই খাতাতে ছিল আঁটা
অনেকগুলো পাতা।
একটা পাতা যেতো উড়ে
তেপান্তরের মাঠে।
অন্য পাতা বসতো গিয়ে
কঙ্কাবতীর ঘাটে।
হঠাৎ কোনো পাতা গিয়ে
ভাসতো সমুদ্দুরে।
একটি পাতা পরীর দেশে
নৃত্য দিতো জুড়ে।
খোকার দাদু খাতার কানে
মন্ত্র দিতেন ফুঁকে।
ফুঁকের গুণে হরেক পাতা
উড়তো বেজায় সুখে।
খোকার দাদুর খাতা নিয়ে
ঘুরতো পরীর দেশে।
পরীরা সব খোকার সাথে
নাচতো মধুর হেসে।
৯. ছোট্ট খেলাঘর
শামসুর রহমান
দীপিতা, তোর খেলাঘরে
আমায় নিবি না কি?
পড়ার ঘরে আর কত ভাই
একলা বসে থাকি?
তোর সে ছোট্র খেলাঘরে
অনেক মজা আছে,
সেখানে তো পুতুলগুলো
মজার ছন্দে নাচে।
আমি তো তোর সঙ্গে রোজই
লেখতে ভালোবাসি,
তাই না মজার খেলাঘরে
দৌড়ে চলে আসি।
খেলতে খেলতে সন্ধেবেলা
যাস তো পরীর দেশে।
সেখানে তোর সময় কাটে
চাঁদের ভেলায় ভেসে।
সঙ্গে নিলে দাদুটিকে
নাচবো আমি সুখে,
চাঁদের শোভা ক্ষণে ক্ষণে
জাগবে আমার মুখে।
দে না রে ভাই দুটি পাখা
আমার কাঁধে জুড়ে,
তাহলে ওই চাঁদের দেশে
গাইবো ছড়ার সুরে।
১০. দীপিতা আর পাখি
শামসুর রহমান
দীপিতা খুব সকাল বেলা
দিলো জুড়ে মজার খেলা
হাতে নিয়ে হলদে পাখি।
যতই তাকে কাছে ডাকি,
মোটেও সে দেয় না সাড়া।
পছন্দ তার পাখির পাড়া।
নানা রঙের পাখি তাকে
মজার নাচে ঘিরে থাকে।
দীপিতা ওর গানের সুরে
দিলো পাখির আসর জুড়ে।
হঠাৎ এক শব্দ হতেই
দেখি চেয়ে পাখিরা নেই।
দীপিতা ওর কোলে একি
রক্তমাখা পাখি দেখি!
কোন শিকারী ছুঁড়ে গুলি
শিকার দিয়ে ভরে ঝুলি?
যখন করে ছোট্র শিকার,
কাঁপে নাকি হাতটি তার?
১১. দীপিতার বায়না
শামসুর রহমান
দীপিতা কয়, ‘আচ্ছা দাদু,
দিন দুপুরে, বিকেল বেলা
খাতার বুকে হরফ এঁকে
খেলছো তুমি কেমন খেলা?
তোমায় দেখি আড়াল থেকে-
তাকাও তুমি দূরের মেঘে,
দেখি মজার ঝর্ণাকলম
খাতার পাতায় থাকে লেগে।
এই যে তুমি খাতা জুড়ে
নক্শা আঁকো শব্দ দিয়ে-
সেসব মজার শব্দ বুঝি
দিচ্ছে তোমায় আজব টিয়ে’।
‘আচ্ছা দাদু, আমায় তুমি
দাও শিখিয়ে তেমন খেলা,
যার জাদুতে বাল্য শিক্ষা
হয়ে যাবে তারার মেলা’।
বলেন দাদু, ‘শোন দীপিতা,
তুই যদি এই খাতায় এসে
কলমটাকে চালিয়ে দিস,
খাতা যাবে আলোয় ভেসে’।
১২. গোলাপের উদ্দেশে নয়না
শামসুর রহমান
গোলাপ তুমি গাছের ডালে
কেমন ক’রে ফোটো?
ঘুম জড়ানো খুব সকালে
কী করে বোন ওঠো?
জগৎ জোড়া সুনাম তোমার
সত্যি বলে জানি।
সবাই তোমায় ভালোবেসে
ডাকে ফুলের রানী।
তোমার ঘ্রাণে সবার প্রাণে
খুশির দোলা লাগে;
কারো কারো মনে আবার
ছড়ার ছন্দ জাগে।
তোমায় নিয়ে কত কবি
পদ্য লেখেন সুখে,
থাকো তুমি ফুলবাগানে
সদাই হাসিমুখে।
জানি তোমার রূপ পাবো না
শত চেষ্টা করে,
যেন ঘ্রাণের মতোই গুণে
মনটি ওঠে ভরে।
১৩. বাড়ি
শামসুর রহমান
বাড়ি করছেন,
আশমান-ছোঁয়া
বাড়ি করছেন!
উনি করছেন,
তিনি করছেন,
দোতলা তেতলা
বাড়ি করছেন।
লেনে বাইলেনে
রাস্তার ধারে,
পুকুরে পাড়ে,
বাড়ি করছেন।
বগর বাজিয়ে
কেমন গাজিয়ে
বাড়ি করছেন।
খোকা খুকুমণি
বাজাও এখুনি
বাজাও হে তালি।
হাত বড় টান,
তবু আলিশান
বাড়ি করছেন
মীর করমালি।
মেরে কিছু মাছি
এ শহরে আছি।
সাত তাড়াতাড়ি
এখনো গড়তে
পারিনিতো বাড়ি।
তবু সান্ত্বনা
আছে এক কণা।
মেঘ-মুল্লুকে
আমি মহাসুখে
গড়েছি মহল!
করিনি খরচ
এক কানাকড়ি।
আমার মহল
বিনি আলোতেই
করে ঝ।
সেখানে নিত্য
খুব সুন্দরী
লাল নীল পরী
দিচ্ছে টহল।
১৪. সাত সাগরের বুড়ো
শামসুর রহমান
সেই যে কবে চাপলো কাঁধে
সাত সাগরের বুড়ো,
হিসেব কষে দেখছি হলো
হাজার বছর পুরো।
দুধ আনো হে, তামাক আনো’,
বলে কাঁধের বুড়ো,
জলদি আনো কড়াই থেকে
মাছের ল্যাজা মুড়ো।
নইলে বাছা লাথির চোটে
করবো পাঁজর গুঁড়ো।
তোমরা খেয়ো মাঝে মাঝে
মজা খুদের কুঁড়ো।
‘কাঁধ ছেড়ে আর নামছি না তো
নেইকো তাড়াহুড়ো।
মাথায় নিয়ে নাচো সবাই,
গানটি সাথে জুড়ো’।
এই না বলে তুলতে থাকে
সাত সাগরের বুড়ো,
হিসেব কষে দেখছি হলো
হাজার বছর পুরো।
১৫. বৃষ্টি পড়ে
শামসুর রহমান
বৃষ্টি পড়ে ঝমঝমিয়ে আকাশ ফেটে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
শুকনো জমি ফোঁটাগুলো খাচ্ছে চেটে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে পাড়াতলীর ধুধু চরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে গরিব চাষির কুঁড়েঘরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে চিকন সবুজ ডুমুর পাতায়,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে খইয়ের মতো, জুঁইয়ের মতো,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে অষ্টপ্রহর অবিরত,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে আঁধার ঢাকা ছোট্র গাঁয়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ঘাটে-বাঁধা ডিঙি নায়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে হারান মাঝির উঠোন জুড়ে,
বৃষ্টি পড়ে,বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে কাজী বাড়ির তাল পুকুরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে, দিচ্ছে উঁকি ছেলেবেলা,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে চলছে দুলে সাধের ভেলা,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে এই শহরে গলির মোড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে আজিমপুরের নতুন গোরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ফ্ল্যাট বাড়ির খোলা ছাদে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
খোলার ঘরে কালো মেয়ে খোঁপা বাঁধে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ঘুমের ভেতর গহীন গাঙে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে মধ্যরাতে স্বপ্ন ভাঙে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে ময়ূরপঙ্খী নায়ের দাঁড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে মায়াপুরীর সিংহদ্বারে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে অনেক দূরের পাহাড়পুরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
বৃষ্টি পড়ে একলা কবির ছাপরা কুঁড়ে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
লেখার ভিতরে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে।তাহলে সবাই ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
আজকের পর্বে আমরা ১৫ টা কবিতা দিয়েছি।কবিতা গুলো আসলেই অনেক সুন্দর।এই পেজ গুলো কে আস্তে আস্তে আপডেট করা হবে,,,ইনশাল্লাহ।আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
No comments