রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতা সমূহ - TECHNICAL BANGLA

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতা সমূহ

                        Technical Bangla 

পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আমাদের সাইটি সর্বোচ্চ কবিতা,উক্তি ও সাধারণ জ্ঞান এবং বিখ্যাত বাণী দিয়ে ভরপুর করব।আপনারা আমাদের সাথেই থাকেন।
আজকের বিষয় বস্তু হলো  কবিতা।সবাই বলতে ভুল হবে,কম-বেশি মানুষ মোটামুটি কবিতা পছন্দ করে।একেক জনের এক এক লেখকের কবিতা পছন্দ করেন।তাই  আমরা প্রতিটি লেখকের জন্য আলাদা আলাদা পর্ব তৈরি করেছি,,,,
হাই বন্ধুরা, আমি নয়ন আছি আপনাদের, মাঝে।আজকে কবিতার পর্ব-১:  কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  এর লেখা ১১ টা কবিতা দেয়া হয়েছে।কবিতা গুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আরো কবিতা দেওয়া হবে,,,,,,
রবীন্দ্র নাথ


চলুন পড়ে আসি কবিতা গুলো-

                          কবিতা -সমূহ


১.                   সোনার তরী
                  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

       গগনে গরজে মেঘ,ঘন বরষা।

      কূলে একা বসে আছি,নাহি ভরসা।
          রাশি রাশি ভারা ভারা
            ধান কাটা হল সারা,
              ভরা নদী ক্ষুরধারা
                                        খরপরশা-
     কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।।
     এখখানি ছোটো খেত,আমি একলা।।
     চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।।
      পরপারে দেখি আঁকা
       তরুছায়ামসী-মাখা
         গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
                                 প্রভাতবেলা-
      এপারেতে ছোটো খেত,আমি একলা।।
       গান গেয়ে তরী বেয়ে কো আসে পারে!
       দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
         ভরা পালে চলে যায়,
          কোনো দিকে নাহি চায়,
             ঢেউগুলি নিরুপায়
                                     ভাঙে দু'ধারে-
  দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।।

    ওগো,তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?

   বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
    যেয়ো যেথা যেতে চাও,
    যারে খুশি তারে দাও-
     শুধু তুমি নিয়ে যাও
                              ক্ষণিক হেসে
    আমারর সোনার ধান কূলেতে এসে।।
    যত চাও তত লও তরণী-পরে।
     আর-আছে আর নাই,দিয়েছি ভরে।।
     এতকাল নদীকূলে
      যাহা লয়ে ছিনু ভুলে 
      সকলি  দিলাম তুলে
                             থরে বিথরে-
     এখন আমারে লহো করুণা করে।।
    ঠাঁই নাই,ঠাঁই নাই-ছোট সে তরী
     আমারি সোনার ধানে গিয়েছি ভরি।
       শ্রবণগগন ঘিরে,
         ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
         শূন্য নদী তীরে
              রহিনু পড়ি-
           যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।।


  ২.            অনন্ত প্রেম
                রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি  
 শত রূপে শত বার  
 জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।  
 চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়  
 গাঁথিয়াছে গীতহার,  
 কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,  
 নিয়েছ সে উপহার  
 জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।  
  
 যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,  
 প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,  
 অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,  
 অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে  
 দেখা দেয় অবশেষে  
 কালের তিমিররজনী ভেদিয়া  
 তোমারি মুরতি এসে,  
 চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।  
  
 আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি  
 যুগল প্রেমের স্রোতে  
 অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।  
 আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা  
 কোটি প্রেমিকের মাঝে  
 বিরহবিধুর নয়নসলিলে,  
 মিলনমধুর লাজে—  
 পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।  
  
 আজি সেই চিরদিবসের প্রেম  
 অবসান লভিয়াছে  
 রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।  
 নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,  
 নিখিল প্রাণের প্রীতি,  
 একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে  
 সকল প্রেমের স্মৃতি—  
 সকল কালের সকল কবির গীতি। 

  ৩.             বীরপুরুষ
            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে  
 মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।  
  
 তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে  
 দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে,  
 আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে  
 টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।  
 রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে  
 রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।  
  
 সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,  
 এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।  
 ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,  
 কোনোখানে জনমানব নাই,  
 তুমি যেন আপন-মনে তাই  
 ভয় পেয়েছ-ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’  
 আমি বলছি, ‘ভয় কোরো না মা গো,  
 ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’  
  
 আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে-  
 অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।  
 তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,  
 ‘দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!’  
 এমন সময় ‘হাঁরে রে রে রে রে’  
  
 ওই – যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!  
 তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে  
 ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,  
 বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে  
 আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,  
 ‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’  
  
 তুমি বললে, ‘যাস নে খোকা ওরে,’  
 আমি বলি, ‘দেখো-নাচুপ করে।’  
 ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,  
 কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে  
 শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।  
 কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,  
 কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।  
  
 এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক’রে,  
 ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।  
 আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে  
 বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে,’  
 তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে  
 চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে  
 বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’  
 কী দুর্দশাই হত তা না হলে!’

 ৪.              মাষ্টার বাবু
             রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

আমি আজ কানাই মাস্টার,  
 বড় মোর বেড়াল ছানাটি  
 আমি ওকে মারি নে মা বেত,  
 মিছিমিছি বসি নিয়ে কাঠি।  
  
 রোজ রোজ দেরি করে আসে,  
 পড়াতে দেয় না ও তো মন,  
 ডান পা তুলিয়ে তোলে হাই,  
 যত আমি বলি ‘শোন, শোন’।  
  
 দিনরাত খেলা খেলা খেলা,  
 লেখা পড়ায় ভারি অবহেলা।  
 আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’  
 ও কেবল বলে ‘মিয়ো, মিয়ো’।  
  
 প্রথম ভাগের পাতা খুলে  
 আমি ওরে বোঝাই মা কত-  
 চুরি করে খাস নে কখনে,  
 ভাল হোস গোপালের মতো।  
  
 যত বলি সব হয় মিছে,  
 কথা যদি একটাও শোনে-  
 মাছ যদি দেখেছে কোথাও  
 কিছুই থাকে না আর মনে।  
  
 চড়াই পাখির দেখা পেলে  
 ছুটে যায় সব পড়া ফেলে।  
 যত বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’  
 দুষ্টামি করে বলে ‘মিয়ো’।  
  
 আমি ওরে বলি বার বার  
 ‘পড়ার সময় তুমি পড় –  
 তার পরে ছুটি হয়ে গেলে  
 খেলার সময় খেলা কোরো’।  
  
 ভাল মানুষের মত থাকে,  
 আড়ে আড়ে চায় মুখপানে,  
 এমনি সে ভান করে যেন  
 যা বলি বুঝেছে তার মানে।  
  
 একটু সুযোগা বোঝে যেই  
 কোথা যায় আর দেখা নেই।  
 আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’,  

 ও কেবল বলে ‘মিয়ো মিয়ো’।। 


 ৫.            দুর্ভাগা দেশ
            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,  
 অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।  
 মানুষের অধিকারে  
 বঞ্চিত করেছ যারে,  
 সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান  
 অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।  
  
 মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে  
 ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।  
 বিধাতার রুদ্ররোষে  
 দুর্ভিক্ষের-দ্বারে বসে  
 ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান।  
 অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।  
  
 তোমার আসন হতে যেথায় তাদের দিলে ঠেলে  
 সেথায় শক্তিরে তব নির্বাসন দিলে অবহেলে।  
 চরণে দলিত হয়ে  
 ধূলায় সে যায় বয়ে -  
 সেই নিম্নে নেমে এসো, নহিলে নাহি রে পরিত্রাণ।  
 অপমানে হতে হবে আজি তোরে সবার সমান।  
  
 যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,  
 পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।  
 অজ্ঞানের অন্ধকারে  
 আড়ালে ঢাকিছ যারে  
 তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।  
 অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।  
  
 শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার,  
 মানুষের নারায়ণে তবুও কর না  নমস্কার।  
 তবু নত করি আঁখি  
 দেখিবার পাও না কি  
 নেমেছে ধূলার তলে হীনপতিতের ভগবান।  
 অপমানে হতে হবে সেথা তোরে সবার সমান।  
  
 দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে -  
 অভিশাপ আঁকি দিল তোমার জাতির অহংকারে।  
 সবারে না যদি ডাকো,  
 এখনো সরিয়া থাকো,  
 আপনারে বেঁধে রাখো চৌদিকে জড়ায়ে অভিমান -  
 মৃত্যু-মাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান। 


৬.              নিদ্রিতা
          রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

একদা রাতে নবীন যৌবনে  
 স্বপ্ন হতে উঠিনু চমকিয়া,  
 বাহিরে এসে দাঁড়ানু একবার---  
 ধরার পানে দেখিনু নিরখিয়া ।  
 শীর্ণ হয়ে এসেছে শুকতারা,  
 পূর্বতটে হতেছে নিশিভোর ।  
 আকাশকোণে বিকাশে জাগরণ,  
 ধরণীতলে ভাঙে নি ঘুমঘোর ।  
 সমুখে প'ড়ে দীর্ঘ রাজপথ,  
 দু ধারে তারি দাঁড়ায়ে তরুসার,  
 নয়ন মেলি সুদূর-পানে চেয়ে  
 আপন-মনে ভাবিনু একবার---  
 অরুণ-রাঙা আজি এ নিশিশেষে  
 ধরার মাঝে নূতন কোন্ দেশে  
 দুগ্ধফেনশয়ন করি আলা  
 স্বপ্ন দেখে ঘুমায়ে রাজবালা ।।  
  
 অশ্ব চড়ি তখনি বাহিরিনু,  
 কত যে দেশ বিদেশ হনু পার !  
 একদা এক ধূসরসন্ধ্যায়  
 ঘুমের দেশে লভিনু পুরদ্বার ।  
 সবাই সেথা অচল অচেতন,  
 কোথাও জেগে নাইকো জনপ্রাণী,  
 নদীর তীরে জলের কলতানে  
 ঘুমায়ে আছে বিপুল পুরীখানি ।  
 ফেলিতে পদ সাহস নাহি মানি,  
 নিমেষে পাছে সকল দেশ জাগে ।  
 প্রাসাদ মাঝে পশিনু সাবধানে,  
 শঙ্কা মোর চলিল আগে আগে ।  
 ঘুমায় রাজা, ঘুমায় রানীমাতা,  
 কুমার-সাথে ঘুমায় রাজভ্রাতা ।  
 একটি ঘরে রত্নদীপ জ্বালা,  
 ঘুমায়ে সেথা রয়েছে রাজবালা ।।  
 কমলফুল বিমল শেজখানি,  
 নিলীন তাহে কোমল তনুলতা ।  
 মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে,  
 বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা ।  
 মেঘের মত গুচ্ছ কেশরাশি  
 শিথান ঢাকি পড়েছে ভারে ভারে ।  
 একটি বাহু বক্ষ-'পরে পড়ি,  
 একটি বাহু লুটায় এক ধারে ।  
 আঁচলখানি পড়েছে খসি পাশে,  
 কাঁচলখানি পড়িবে বুঝি টুটি---  
 পত্রপুটে রয়েছে যেন ঢাকা  
 অনাঘ্রাত পূজার ফুল দুটি ।  
 দেখিনু তারে, উপমা নাহি জানি---  
 ঘুমের দেশে স্বপন একখানি,  
 পালঙ্কেতে মগন রাজবালা  
 আপন ভরা লাবণ্যে নিরালা ।।  
  
 ব্যাকুল বুকে চাপিনু দুই বাহু,  
 না মানে বাধা হৃদয়কম্পন ।  
 ভূতলে বসি আনত করি শির  
 মুদিত আঁখি করিনু চুম্বন ।  
 পাতার ফাঁকে আঁখির তারা দুটি,  
 তাহারি পানে চাহিনু একমনে---  
 দ্বারের ফাঁকে দেখিতে চাহি যেন  
 কী আছে কোথা নিভৃত নিকেতনে ।  
 ভূর্জপাতে কাজলমসী দিয়ে  
 লিখিয়া দিনু আপন নামধাম ।  
 লিখিনু, 'অয়ি নিদ্রানিমগনা,  
 আমার প্রাণ তোমারে সঁপিলাম ।'  
 যতন করে কনক-সুতে গাঁথি  
 রতন-হারে বাঁধিয়া দিনু পাঁতি---  
 ঘুমের দেশে ঘুমায়ে রাজবালা,  
 তাহারি গলে পরায়ে দিনু মালা।।


৭.                   প্রাণ
            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,  
 মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।  
 এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে  
 জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই!  
 ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,  
 বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রু-ময় -  
 মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত  
 যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়!  
 তা যদি না পারি, তবে বাঁচি যত কাল  
 তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,  
 তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল  
 নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই।  
 হাসিমুখে নিয়া ফুল, তার পরে হায়  
 ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।। 



৮.             বর্ষার দিন
          রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


এমন দিনে তারে বলা যায়  
 এমন ঘনঘোর বরিষায় -  
 এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে  
 তপনহীন ঘন তমসায়।।  
  
 সে কথা শুনিবে না কেহ আর,  
 নিভৃত নির্জন চারি ধার।  
 দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,  
 আকাশে জল ঝরে অনিবার -  
 জগতে কেহ যেন নাহি আর।।  
  
 সমাজ সংসার মিছে সব,  
 মিছে এ জীবনের কলরব।  
 কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে  
 হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব -  
 আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।  
  
 বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,  
 চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।  
 সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,  
 বাদলবায়ে তার অবসান -  
 সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।  
  
 তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার  
 নামাতে পারি যদি মনোভার!  
 শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে  
 দু কথা বলি যদি কাছে তার  
 তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।  
  
 আছে তো তার পরে বারো মাস -  
 উঠিবে কত কথা, কত হাস।  
 আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,  
 সে কথা কোনখানে পাবে নাশ -  
 জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।  
  
 ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,  
 বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।  
 যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে  
 সে কথা আজি যেন বলা যায়  
 এমন ঘনঘোর বরিষায়।।


 ৯.             বন্ধন
         রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বন্ধন? বন্ধন বটে, সকলি বন্ধন--  
 স্নেহ প্রেম সুখতৃষ্ণা; সে যে মাতৃপাণি  
 স্তন হতে স্তনান্তরে লইতেছে টানি,  
 নব নব রসস্রোতে পূর্ণ করি মন  
 সদা করাইছে পান। স্তন্যের পিপাসা  
 কল্যাণদায়িনীরূপে থাকে শিশুমুখে--  
 তেমনি সহজ তৃষ্ণা আশা ভালোবাসা  
 সমস্ত বিশ্বের রস কত সুখে দুখে  
 করিতেছে আকর্ষণ, জনমে জনমে  
 প্রাণে মনে পূর্ণ করি গঠিতেছে ক্রমে  
 দুর্লভ জীবন; পলে পলে নব আশ  
 নিয়ে যায় নব নব আস্বাদে আশ্রমে।  
 স্তন্যতৃষ্ণা নষ্ট করি মাতৃবন্ধপাশ  
 ছিন্ন করিবারে চাস কোন্ মুক্তিভ্রমে!  


১০.             মায়াবাদ
            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

হা রে নিরানন্দ দেশ, পরি জীর্ণ জরা,  
 বহি বিজ্ঞতার বোঝা, ভাবিতেছ মনে  
 ঈশ্বরের প্রবঞ্চনা পড়িয়াছে ধরা  
 সুচতুর সূক্ষ্মদৃষ্টি তোমার নয়নে!  
 লয়ে কুশাঙ্কুর বুদ্ধি শাণিত প্রখরা  
 কর্মহীন রাত্রিদিন বসি গৃহকোণে  
 মিথ্যা ব'লে জানিয়াছ বিশ্ববসুন্ধরা  
 গ্রহতারাময় সৃষ্টি অনন্ত গগনে।  
 যুগযুগান্তর ধ'রে পশু পক্ষী প্রাণী  
 অচল নির্ভয়ে হেথা নিতেছে নিশ্বাস  
 বিধাতার জগতেরে মাতৃক্রোড় মানি;  
 তুমি বৃদ্ধ কিছুরেই কর না বিশ্বাস!  
 লক্ষ কোটি জীব লয়ে এ বিশ্বের মেলা  
 তুমি জানিতেছ মনে, সব ছেলেখেলা।  


 ১১.       কোথায় আলো
             রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

হা রে নিরানন্দ দেশ, পরি জীর্ণ জরা,  
 বহি বিজ্ঞতার বোঝা, ভাবিতেছ মনে  
 ঈশ্বরের প্রবঞ্চনা পড়িয়াছে ধরা  
 সুচতুর সূক্ষ্মদৃষ্টি তোমার নয়নে!  
 লয়ে কুশাঙ্কুর বুদ্ধি শাণিত প্রখরা  
 কর্মহীন রাত্রিদিন বসি গৃহকোণে  
 মিথ্যা ব'লে জানিয়াছ বিশ্ববসুন্ধরা  
 গ্রহতারাময় সৃষ্টি অনন্ত গগনে।  
 যুগযুগান্তর ধ'রে পশু পক্ষী প্রাণী  
 অচল নির্ভয়ে হেথা নিতেছে নিশ্বাস  
 বিধাতার জগতেরে মাতৃক্রোড় মানি;  
 তুমি বৃদ্ধ কিছুরেই কর না বিশ্বাস!  
 লক্ষ কোটি জীব লয়ে এ বিশ্বের মেলা  
 তুমি জানিতেছ মনে, সব ছেলেখেলা।  

এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কয়েকটি কবিতা দেয়া হয়েছে এবং আর
আমাদের সাইটি দিন দিন আপডেট হবে,ইনশাল্লাই।
লেখার মধ্যে যদি ভুল হয়।তাহলে আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

No comments

Theme images by diane555. Powered by Blogger.